Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeঅন্যান্যযে কারণে প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন জো বাইডেন

যে কারণে প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন জো বাইডেন

জয় বাংলাদেশ : ৮১ বছর বয়সি বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছিলই। তা সত্ত্বেও এ বারে তাঁকেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করা হয়েছিল। তবে কিছু দিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নেওয়ার পরেই তাঁকে প্রার্থিপদ থেকে সরানোর দাবি জোরালো হয়। একের পর এক বেফাসঁ মন্তব্য, সিদ্ধান্ত ও গণমাধ্যমের বড় অংশ জুড়ে ছিল কয়েকটা দিন।

আর মাত্র চার মাস পরেই নির্বাচন আমেরিকায়। তার আগেই প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রবাসীর উদ্দেশে লেখা এক খোলা চিঠিতে এই কথা জানালেন বাইডেন। ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন তিনি। নভেম্বরের নির্বাচনে তাঁরই লড়ার কথা ছিল রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বাইডেন সরে দাঁড়ানোয় ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা তৈরি হলেও বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য উপযুক্ত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। কমলা ছাড়াও দৌড়ে রয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা এবং ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমও।

“বাইডেন তাঁর মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালন করার পরিকল্পনা করছেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি, ওয়াশিংটন ডিসি সময় বেলা ১২টায়।

নিজের এক্স হ্যান্ডলে বাইডেন লিখেছেন, ““আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সম্মানের বিষয়। এবং যদিও পুনরায় নির্বাচিত হওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল, আমি বিশ্বাস করি আমার দল এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমার সরে দাঁড়ানো উচিত, এবং আমার মেয়াদের বাকি সময় পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত,” বাইডেন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তাঁর নিজস্ব অ্যাকাউন্টে লেখেন। তার ৩০ মিনিট পর, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেন। অগাস্ট মাসে শিকাগোতে ডেমোক্র্যাট দলের ন্যাশনাল কনভেনশনে আনুষ্ঠানিক মনোনয়নের জন্য হ্যারিস এখন তাৎক্ষনিক ফেভারিট। “আজ আমি কমলাকে আমাদের দলের প্রার্থী হিসেবে আমার পূর্ণ সমর্থন এবং অনুমোদন দিতে চাই,” বাইডেন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন। “ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা – এখন সময় হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্রাম্পকে হারানোর।”

আগামী সপ্তাহে দেশবাসীকে বিস্তারিত ভাবে তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন বাইডেন।দলের ভেতরে বাইরে ৮১ বছর বয়সি বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছিলই। তা সত্ত্বেও এ বারে তাঁকেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করা হয়েছিল। তবে কিছু দিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নেওয়ার পরেই তাঁকে প্রার্থিপদ থেকে সরানোর দাবি জোরালো হয়। ওই বিতর্কসভায় বাইডেনের আচরণ অসংলগ্ন ছিল বলে দাবি। তাঁর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। ট্রাম্পের একাধিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সঠিক যুক্তিও সাজাতে পারেননি তিনি। বাইডেনের এই দুর্বলতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি ট্রাম্পও। বিতর্কসভার পর থেকে আমেরিকার ভিতরে তো বটেই, বাইরে একাধিক রাষ্ট্রনেতাও বাইডেনের সমালোচনা করেন।

ডেমোক্র্যাট পার্টির অন্দর থেকেই দাবি উঠছে যে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দল এবং নিজের পরাজয় এড়াতে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। আমেরিকায় দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, তাঁকে নির্বাচনী ময়দান থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন ওবামাও। তার পরেও বাইডেন দাবি করেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে এবং জিতলে আরও পাঁচ বছর এই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। দলের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতির ডাক দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, তাঁর স্বাস্থ্যের সম্পর্কে যে রটনা চলছে, তা রিপাবলিকানদের ‘চক্রান্ত’। বর্তমানে কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে বাইডেনের। তিনি গৃহবন্দি রয়েছেন। বাইডেন সরে দাঁড়ানোয় কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার পথ আরও প্রশস্ত হল।

এদিকে, দলের নেতা চাক শুমার বাইডেনের প্রশংসা করে বলেছেন, বাইডেন একজন দারুণ রাষ্ট্রপতিই শুধু নন আইনসভার একজন দুর্দান্ত নেতাও বটে। যদিও নির্বাচন থেকে সরে যাবার সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না তবু তিনি নিঃসন্দেহে আবার তার দেশ, দল এবং আমাদের ভবিষ্যতকে সবার আগে বিবেচনায় রেখেছেন । বাইডেনের এই সিদ্ধান্তে হাউজের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঙ্গে শুমার ভূমিকা রাখেন বলে জানা যায়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ওহাইও, মন্টানা এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় পুনর্নির্বাচনের কঠিন প্রচারণার মুখোমুখি হন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটররা। বাইডেনের কারণে তাদের জয়ের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে রাষ্ট্রপতিকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তারা।

যদিও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রাখলেও তার সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ভোটারদের ইচ্ছার ব্যাপারটি অকার্যকর করেছে বলে মনে করছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এক বিবৃতিতে বলেন, “এই নজিরবিহীন সন্ধিক্ষণে আমেরিকার ইতিহাসের, যা ঘটেছে তা আমাদের অবশ্যই পরিষ্কার ভাবে জানতে হবে। নির্বাচনের মাত্র ১০০ দিন আগে ডেমোক্র্যাট পার্টি তাদের প্রার্থীকে ব্যালট থেকে সরিয়ে দিয়েছে।”তিনি আরও বলেন, এই মুহুর্তে বাইডেন প্রশাসনের বিপর্যয়কর নীতিগত ব্যর্থতার কারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসকে নিয়েও খুব একটা আশাবাদী নয় দলটি।

দলটির অনেক শীর্ষ নেতাদের মতে, ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে যিনি প্রার্থী হবেন, তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। তাঁদের যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটিকে সুযোগে পরিণত করা। বাইডেন থাকতে যে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না, নতুন প্রার্থীকে ঘিরে সেগুলো সম্পন্ন করা। বাইডেন তাঁর বিতর্ক ঘিরে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে গেছেন, সেই সংকট কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনকে নিজেদের মতো করে রূপ দেওয়া।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments