জয় বাংলাদেশ: রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরসহ ৪জন নিহত এবং ১০ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা-উপজেলায় উত্তেজনার মাঝে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল। রাজপথ রক্তাক্ত হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রংপুর মহানগরসহ বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুরের সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের বাড়ি ও অফিস এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।
টাউন হল সড়ক থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচী রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে নগরীর ভাঙ্গা জামে মসজিদ এলাকায় আসে। সেখানে বিএনপি ও জামায়াত তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয়। বেলা সাড়ে ১২টায় দলীয় কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র, লাঠি-সোটা, ইট-পাটকেল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে আন্দোলনকারীরাও লাঠি-সোটা, ইট-পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলে নগরীর গুড়াতি পাড়ার মাহবুব আলমের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা খাইরুল ইসলাম সবুজ (২৮), মাসুম (৩০), সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায় ও দেহরক্ষী শ্যামল নিহত হন। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়। আধা ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর রাজপথ দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিকবিদিক পালিয়ে আত্মরক্ষা করে।
সংঘর্ষের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিও চালিয়েছে। আমরা এ সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনীকে এক মুহূর্তও দেখতে চাই না। তাদের যেখানে পাবো প্রতিহত করবো।
এর আগে সকালে অবস্থান কর্মসূচীতে শিক্ষার্থী মৌমিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখন আলোচনায় বসতে বলছেন। একাত্তরে তার বাবা তো আলোচনায় বসেননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার ভাইয়ের লাশের উপর দিয়ে আলোচনায় বসতে পারবো না। তাই আর কোনও আলোচনা নয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চাই।
শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির উপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আমি প্রশাসনের ভাইদের বলবো আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন। কারণ যারা আন্দোলনে রয়েছে তারা আপনার ভাই-বোন। তাদের উপর গুলি করবেন না। আজকের জমায়েত দেখে বোঝা যাচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ সকলেই চায়।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ বলেন, আমরা পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান করা এনটিভির ক্যামেরা পারসন আরমান, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার ফকরুল শাহীন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার রেজাউল ইসলাম মানিক, একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান আলী হায়দার রনি, ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, অনলাইনের মিজানসহ ১০ জন গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর করেছেন আন্দোলনকারীরা।
অন্যদিকে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সেই সাথে মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।