জয় বাংলাদেশ: রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত ছয় কমিশনের মধ্যে পাঁচটি কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর গেজেট আকারে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
পাঁচটি কমিশন হলো – নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান রাখা হয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে। এছাড়া এই কমিশনের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছেন শিক্ষাবিদ এবং স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ উর রহমান, শাসন প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন, ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে রয়েছেন হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক, ফরিদ আহমেদ শিবলী, সুপ্রীমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাজদার হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপন) ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনে প্রধান হিসেবে আছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সোয়াস অধ্যাপক মোস্তাক খান, ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
পুলিশ সংস্কার কমিশন
সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও যুগ্মসচিব মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শেখ সাজ্জাদ আলী, পুলিশের সাবেক ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মো: গোলাম রসুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, মানবাধিকার কর্মী এএসএম নাসিরউদ্দিন এলান ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে রয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়্যারম্যান আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী। তার কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএ ফিরোজ আহমেদ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। এ সময় তিনি ছয় কমিশনের প্রধানদের নামও ঘোষণা করেন। এরমধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা দেয়া হলেও পরে তাকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো: শফিকুল আলম বলেন, সরকার যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তারমধ্যে ৫ টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। একটি কমিশনের দুয়েকজন সদস্য এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। চূড়ান্ত করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। চূড়ান্ত হলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
জানা গেছে, কমিশনগুলো ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় করা হবে, যেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবেই সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।