ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে করা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে ফেলে দেয়া ৩টি মোবাইল উদ্ধারের জন্য তাকে নিয়ে ঝিনাইদহে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কারাগারে আটক আসামি বাবুকে হাজির করা হয়। এরপর বাবুর তিনটি মোবাইল উদ্ধারের জন্য ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ও হত্যার মূল ঘাতক শিমুল ভুইয়ার জব্দ মোবাইল সেট পর্যালোচনায় পাওয়া যায় যে, শিমুল ভূইয়া ১৫ মে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে এবং ১৬ মে রাতে গ্যাস বাবুর সাথে যোগাযোগ করে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে অপহরণ ও হত্যা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলে। পরবর্তীতে শিমুল ভুইয়া ও গ্যাস বাবু ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় মিটিং করে ভিকটিম এমপি আনারের ছবি বিনিময় করে। এ ছাড়াও ১৭ মে থেকে ১৯ মে রাত পর্যন্ত শিমুল ভুইয়ার সঙ্গে বাবুর হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ হয়, এসএমএস আদান-প্রদান হয় এবং ভিকটিম আনার অপহরণ ও পরবর্তী টাকা পয়সা সংক্রান্তে কথাবার্তা হয়। উপর্যুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাবুকে গ্রেপ্তার করে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সে ঘাতক শিমুল ভুইয়ার সাথে ভিকটিম আনার অপহরণ ও হত্যা সংক্রান্তে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ, ছবি আদান প্রদান ও এসএমএস আদান প্রদানের কথা স্বীকার করে। শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার মোবাইল সেটগুলো কোথায় এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবু জানায় তার মোবাইল সেটগুলো হারিয়ে গেছে এবং এই সংক্রান্তে থানায় জিডি করেছে। পরবর্তীতে ১৪ জুন মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
জবানবন্দিতে আসামি স্বীকার করে যে, আসামি শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগকৃত মোবাইল সেট তিনটির মধ্যে দুটি গাঙ্গুলী হোটেলের পিছনের পুকুরে এবং একটি স্টেডিয়ামের পূর্ব পার্শ্বের পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। এসব মোবাইল সেটগুলোতে ভিকটিম আনার অপহরণ ও হত্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে বিধায় সেটগুলো প্রয়োজন। তাই মোবাইল সেট গুলো কোন কোন স্থানে ফেলেছে সেই স্থান নির্ধারণসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত মোবাইল সেটগুলো উদ্ধার করার জন্য হাজতি আসামিকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করার জন্য আসামি গ্যাস বাবু পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন। অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবুল কাশেম রিমান্ডের আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। এছাড়া রাষ্ট্র পক্ষে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন বলেন, আদালত আসামি বাবুর রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করেছেন। একইসঙ্গে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেখানে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাবুকে নিয়ে ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করবে। এছাড়া মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আদালত আসামির রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে তাকে নিয়ে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ঝিনাইদহে আলামত উদ্ধারের জন্য আদেশ দিয়েছেন। তবে এই আদেশের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা রিভিশন করব।
এর আগে গত ১৪ জুন আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি প্রদান করেন বাবু। গত ৯ জুন বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। জানা যায়, গত ২২ মে আনোয়ারুল আজীমকে খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন ।