Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদশিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফেরার আহ্বান জানালেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফেরার আহ্বান জানালেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জয় বাংলাদেশ: শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিপ্লব করতে গিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। তোমাদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।’ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বার্তায় এই আহ্বান জানিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। আজ বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হলো।

বার্তায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, সাংবাদিকসহ পেশাজীবীদের স্মরণ এবং গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে আহতদের অভিবাদন জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।’

বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম মাস উদ্‌যাপন করছি। ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় বিপ্লবের জন্য শত শত ছাত্র এবং সর্বস্তরের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তারা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, যার নেতৃত্বে নৃশংস একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। শেখ হাসিনা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র এবং একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আমাদের বাংলাদেশকে এর পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের।’

তরুণদের উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনো নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছ এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চিরবিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছ। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাঁদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছ এবং সারা দেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছ। তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার।’

ড. ইউনূস বলেন, এক মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা এ দেশে এসেছে এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ ছাড়া জুলাই ও আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল তৈরি করার লক্ষ্যে শীর্ষ আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁদের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হলো বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাত পাওয়া হাজার হাজার মানুষের বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে তাঁদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে। শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূরদূরান্তে যাঁদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলোতে পূর্ণাঙ্গতা দেওয়া হচ্ছে। আহত শত শত মানুষ যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। তিনি বলেন, ‘যাঁদের শাহাদাতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, আমরা তাঁদের কখনোই ভুলব না।’

বলপূর্বক গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতির’ সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। আলাদাভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষা করছে, তাদের বেদনায় তারা (সরকার) সমব্যথী। আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

গত মাসের শেষের দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সরকার এ পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গ্রহণ করেছে, তার একটা প্রতিবেদন তুলে ধরার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তিনি বলেন, তাঁরা রাজনৈতিক দল, সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের নেতা এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বৈঠক করে যাচ্ছেন। তারা (রাজনৈতিক দল) সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকেও প্রচুর সমর্থন পেয়ে অভিভূত হয়েছেন। সাহসী ও দেশপ্রেমিক প্রবাসীরাও জাতি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি তাঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

শহীদদের প্রতিটি পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা কখনোই শহীদদের স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments