Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদশিব নারায়ণ যেভাবে জাতীয় পতাকার নকশাকার হয়ে উঠেছিলেন

শিব নারায়ণ যেভাবে জাতীয় পতাকার নকশাকার হয়ে উঠেছিলেন

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শিব নারায়ণ দাশ। তিনি আজ ৭৮ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।

ব্যক্তিজীবন
শিব নারায়ণ দাশের পিতা সতীশ চন্দ্র দাশ। তিনি কুমিল্লাতে আয়ূর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রীর নাম গীতশ্রী চৌধুরী এবং এক সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ। শিব নারায়ন প্রথম ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন তিনি। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্র জীবনে তিনি ‘শিবু দা’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

জাতীয় পতাকা নকশার প্রেক্ষাপট
১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয় বাংলা বাহিনী গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।

এই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৮নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিব নারায়ন দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।

সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১১৬নং কক্ষে রাত এগারটার পর শিব নারায়ণ দাশ পুরো পতাকা ডিজাইন সম্পন্ন করেন।

সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সের টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন। তারা ভোরের মধ্যেই কয়েকটি পতাকা তৈরি করে দেন।

পরদিন ৬ দফা দিবস উপলক্ষে পল্টন ময়দানে শ্রমিক লীগের সমাবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেই পতাকা। পরে ওই পতাকা নিয়েই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয় বাংলাদেশ। শিব নারায়ণ দাশের তৈরি করা বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত এই পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সরকার শিল্পী কামরুল হাসানকে পতাকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলে। কামরুল হাসান মানচিত্র সম্বলিত ওই লাল-সবুজ পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দিয়ে যে পতাকাটি ডিজাইন করেন সেটিই এখন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা দিবসের এক অনুষ্ঠানে পতাকার মাঝে মানচিত্র আঁকার কারণ ব্যাখ্যা করে শিব নারায়ণ দাশ বলেছিলেন, পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা আলাদা করে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বোঝাতে মানচিত্রটি দেওয়া হয় এবং স্বাধীনতার পরে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

মানচিত্র সরানোর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পতাকা সঠিকভাবে তুলে ধরা জাতির কর্তব্য। কিন্তু মানচিত্র থাকায় পতাকাটি আঁকা অনেক কঠিন এবং বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সহজ করে পতাকা আঁকার জন্য মানচিত্রটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’

৭৮ বছর বয়সে আজ তিনি হাসপাতালের বিছানায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলার অকুতভয় এ সৈনিক তার মরদেহটিকেও দান করে গেছেন দেশের কল্যাণে। মৃত্যুর পর শিব নারায়ণের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেছেন, ‘বাবার মরদেহ বারডেমের মরচুয়ারিতে রাখা হবে। তার দেহ এখানে দান করা হবে এবং কর্নিয়া দান করা হবে সন্ধানীতে।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments