Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeঅন্যান্যসবুজ পাহাড়ে অশান্তির ঝড়

সবুজ পাহাড়ে অশান্তির ঝড়

আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। গেল বছরের শেষ দিক থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উগ্র সন্ত্রাসী কুকি চিন। ২০২২ সালে কুকি চিনের আত্মপ্রকাশ। গেল বছরের শেষ দিকে তারা তাদের আত্মপ্রকাশটা বেশ বড়ভাবেই জানান দিয়েছিল। সে সময় যৌথবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছিল। সেই অভিযানে একজন সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছিল। কুকি চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের জঙ্গি আস্তানা এবং প্রশিক্ষণ গভীর জঙ্গলে দিত। প্রশ্ন উঠেছেÑ যে কুকি চিন ২০২২ সালে আত্মপ্রকাশ করলো তাদের প্রধান দাবি পার্বত্য অঞ্চলে যে নয়টি উপজেলা আছে তার শায়েত্ব শাসন দিতে হবে। বর্তমানে সেখানে শান্তি আলোচনা চলমান ছিল। সেই চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যে ২২ এপ্রিল আরেক দফা শান্তি আলোচনা করার কথা ছিল। এই শান্তি আলোচনার মধ্যে তারা নজিরবিহীন সতেরো ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ব্যাংকে হামলা চালালো, ১৪টি অস্ত্র লুট করলো, টাকা লুট করলো। কীভাবে তারা এতো ক্ষমতা পেল। হামলার পর যে প্রশ্ন উঠেছে- এই হামলায় আন্তর্জাতিক কোনো ইন্দন আছে কিনা এবং ঘোষণা দিয়ে যে হামলা তারা করেছে সেখানে গোয়েন্দা নজরদারি কতখানি ছিল?

আমি জোনাল কামান্ডার হিসেবে ২০৯১ সাল পর্যন্ত বান্দরবানে ছিলাম। অনেকবার আমার কাজের কারণে রুমাতে গিয়েছি। আমার কাছে রুমা ছিল এক অসাধারণ জায়গা! বেশিরভাগ মানুষই খ্রিস্টান। এরা কনভার্ট হয়েছিল এথিস্ট, মুরং ও কুকি সম্প্রদায় থেকে। সব মিলিয়ে এখানে এশিয়ান একটা ডোমেইন তৈরি হয়েছিল। জায়গাটি অত্যন্ত শান্ত ছিল। রুমা উপজেলাটা ছিল রুমা বাজারে। উন্নয়নমূলব এলাকা। ঠিক তার উপরে পাহাড় চূড়াতে ছিল আমাদের একটা ব্যাটালিয়ন। এখনো আছে। যেটাকে রুমা গ্র্যারিসন বলা হয়। ওই শান্ত অবস্থা থেকে আজকের অস্থির অবস্থায় কীভাবে এলো- এর ছোট্ট একটা কারণ আমি উল্লেখ করছি- কুকি চিন বলতে যাদের বুঝায় তাদের বড় নাম হচ্ছে বম। বান্দরবানে যত ছোট ছোট ট্রাই আছে তাদের মধ্যে বমরা ছিল সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত। এদের একটা যোগাযোগ ছিল চিন রাজ্যের সাথে। চিন মানে মিয়ানমারের চিন। এদের সম্প্রদায় আছে- থানচিতে, রুয়াংচৌ উপজেলাতে। এখন তাদের বিস্তৃতি ঘটেছে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ব পাশের সাথে মিজোরাম, মিজোরামের পরে মনিপুর, তার নিচে চিন ও সেগাইনরিজেন। চিন ও সেগাইনরিজেন হলো মিয়ানমারের জায়গা।মিজোরামের আর মনিপুর ভারতের। এই জায়গাতে একটা ট্রাই জংশন আছে। এই ট্রাই জংশনটা হলো ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। এই এলাকাটার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম। কুকি চিনদের যাতায়াতের রাস্তা কিন্তু এই এলাকার ভেতর দিয়ে।

এই কুকি চিনদের উত্থান হয়েছে মাত্র দুই থেকে তিন বছর আগে। তাদের উত্থান হয়েছে এ কারণে যে একটা বৃহৎ উপজাতী চট্টগ্রাম পাহাড়ে বিস্তৃতি করা হয়েছে তারা মূলত চাকমা। চাকমার ডোমিনেশান……. অনেক আগে থেকে ছিল বলেই তিনটি জেলা করা হয়েছে। তার পরও চাকমা ডোমিনেশানটা এখনো রয়ে গেছে। এই যে আন্তঃট্রাই ১৩ টি ট্রাই আছে পাহাড়ে তার মধ্যে ১২টি আছে বান্দরবানে। এই যে আন্তঃট্রাইয়ের ভেতর সংঘর্ষ ছিল তা চলে আসছে সেটার প্রতিফলনে আমরা যেটা বুঝেছিলাম তাদের দাবি ছিল তারা নিপীড়িত হচ্ছেন চাকমাদের দিয়ে। চলে আসি এখনকার কথায়- যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। আমি যখন ছিলাম তখন থানচিতে যেতে হলে হেলিকপ্টার লাগতো। কোনো রাস্তা তখন ছিল না। এখন থানচি যেতে রাস্তা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র হয়েছে। আমার কাছে সবকিছু এ বিষয়টি আশ্চর্য লাগলো যদি এখনকার কথা বলি। যেহেতু সামরিক বাহিনী তুলে নেওয়া হয়েছে…………….। তারা ক্যান্টনমেন্টে আছে। আমি যতদূর জানি- এখন তাদের প্যারিমিটার ডিফেন্সের জন্য যতটুকু করা দরকার ততটুকু করছে। তাদেরকে না ডাকলে তারা আসছে না।……….সিভিল পাওয়ার। আর্মির অপারেশান আগে যেটা ছিল সেই অপারেশানটা কিন্তু ওভারঅল অপারেশান। কাজেই আগে যখন ছিল তখন কিন্তু আর্মির সব দায়িত্ব ছিল।

পুলিশ বলেন, আনসার বলেন সেখানে আর্মিই ছিল সকল দায়িত্বে। এখন পুলিশ পুলিশের জায়গায় চলে গেছে, র‌্যাব র‌্যাবের জায়গায় চলে গেছে। কো-অডিনেশনের অভাব আমি লক্ষ্য করছি। আমার নিজেরই প্রশ্ন- যে ১৪টা রাইফেল ছিনিয়ে কীভাবে নিয়ে যায়! পুলিশের কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে যাওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বললেন, সাব-স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া অর্থাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে একটা প্রস্তুতি নিয়ে তারা এই কাজটা করেছে। টাকা হারানো গেছে কি না গেছে সেটা বড় প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হচ্ছে- তারা ব্যাংকের ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে গেছে। বাজারের মসজিদ ঘেরাও করেছে। পুলিশ-আনসার বাজার পাহাড়ায় ছিল তাদের কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে গেল। একজন সৈনিকের কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে যাওয়া বিশাল অমর্যাদার ব্যাপার। এটা কীভাবে হতে পারে! ঠিক তার পরের দিন থানচি বাজার সংলগ্ন হলো বিজেপি ক্যাম্প যেটা একসময় ব্যাটেলিয়ান হেডকোয়ার্টার ছিল। পাশেই থানা। ঠিক তার দুইশ গজের ভেতর এই কাজটা হলো। ভিডিও ফুটেজে দেখলাম তারা জিপে করে এসছে। সেখান থেকেও তারা রাইফেল নিয়ে গেছে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- তাদের শক্তি জানান দেওয়া, তাদের অর্গানাইজেন এত শক্তিশালী সেটা শুরু আমাদেরকে নয়, সেটা তাদের অনুসরণকারীদেরও জানান দেওয়া।

সেনাবাহিনী সেখানে কমপ্লিট অপারেশানের ছিল ৩০ বছরে ওপরে। আমি ছিলাম তিন বছর। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। নিয়মিত অপারেশনে একটা বাহিনী থাকলে অনেক জানাশোনা হয় তাদের। রুমা শান্ত ছিল। তার পরো সেখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিল। রাতের বেলা ডোমিনেটিং পেট্রোল বেরতো। প্রতিদিন। ওই পাহাড় থেকে নেমে এসে করা হতো। এটা করার কারণে লোকাল ইনটেলিজেন্স সেনাবাহিনীর কাছে থাকতো- কোন লোক কখন কোথা থেকে এসে কোথায় গেছে। তাদের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যেত। তাদের কাছে সব খবরা-খবর পাওয়া যেত। বর্ডারের বাইরে কি হচ্ছে সেটাও আমরা মুটামোটি জানতে পারতাম। সেই জায়গাটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেনাবাহিনী তুলে নেওয়ার কারণে। তারা এখন রিলাক্সে আছে পর্যটন কেন্দ্র করা নিয়ে।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কুকি ন্যাশানাল ফ্রন্ট হচ্ছে তাদের পলিটিক্যাল ওয়ে। আর কুকি চিন ন্যাশানাল আর্মি সিএনএএনএ। এদের সাহায্যে…………………. নাথান বম। পাহাড়গুলো উত্তর-দক্ষিণে। পাহাড়গুলো পূর্ব-পশ্চিমে না যে আপনি পাহাড় দিয়ে বর্ডার পর্যন্ত যেতে পারবেন। পাহাড় ক্রস করে আপনাকে যেতে হবে। এটা খুবই দুর্গম অঞ্চল। দেখলে মনে হয় নীচে। নীচে মানে আট থেকে দশ ঘণ্টা হাঁটা পথ। হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সেনাবাহিনী…… থাকাতে তারা একটা প্রোসিডিউটগড়ে তুলেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিভিন্ন জায়গা ও বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে তুলে নিয়েছে বিশ্বাস করে। এর একটা ইমপেক্ট হয়েছে। এটা এদের জন্মগ্রহণের জায়গাটা।

আমরা আন্তর্জাতিক মনিটরিং কতটুকু করেছি সেটা জানি না। বিশেষ করে র‌্যাব, পুলিশ এবং আমাদের ইনটেলিজেন্স। চিন রাজ্য এখন কিন্তু মোটামুটিভাবে মিয়ানমারের দখলেও নেই। চিন ন্যাশানার আর্মি, আছে কুকি ন্যাশানাল ফ্রন্ট, কুকি লিভারেশান আর্মি আছে। এদের কাছে অস্ত্র আছে। এরা যুদ্ধ করছে এখন চাকমাদের বিরুদ্ধে। এর দক্ষিণে আছে আরাকান আর্মি। সেখানে আমাদের বর্ডার। আরাকান আর্মি চিনের একটি জায়গা নিয়ে নিয়েছে। সেটা হচ্ছে পলাশোয়া। যেটা হাব। ইন্ডিয়ার কারবান প্রোজেক্টের হাব। এটা নিয়ে চিন রাজ্যের যে ….. রা আছে সিএনএ এবং কেএনএ- এদের সাথে আরাকান আর্মির একটা দ্ব›দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্বটা মাঝেমধ্যে ফুটে ওঠে। তার ঠিক উত্তরে সেকেন্ড রিজেন। সেখানে আছে মিজোরাম। সেখানেও কিন্তু যুদ্ধ চলছে। মিজোরাম অশান্ত। মনিপুরে কুকি চিন মাথাইসদের সাথে যুদ্ধ করছে। সেখানে পুলিশের কাছ থেকে প্রায় ছয়শ’ বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সেই কারণে সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই জায়গাটা যদি আইসোলেশনে দেখেন তা হলে মনে হবে আমরা ভুল করেছি।

মিয়ানমারের চিন রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল। সেখানেকেন্দ্রীয় সরকার যুদ্ধ করছে। মনিপুরে মাথাইস এবং কুকিদের সাথে যুদ্ধ করছে। দক্ষিণ মিজোরাম অশান্ত। চিন রাজ্য থেকে যে কুকিরা মিজোরাম ও মনিপুরে গিয়েছে এটা নিয়েই গোণ্ডগোল শুরু হয়েছে। এ জায়গাগুলোতে আমাদের শুধুমাত্র থানচি, রাওংছড়ি অথবা রুমাকে আইসোলেশানে দেখার কোনো কারণ নেই। অস্ত্র কোথা থেকে আসছে?

আরেকটি কথা আমি বলতে চাই- এই পুরো এলাকাটা খ্রিস্টান ডোমিনেটেড এরিয়া। আন্তর্জাতিক একটা ম্যাপও বেরিয়েছে। রেড ম্যাপ। এখানে আমাদের কুকি চিনরা নিজস্ব খ্রিস্টান এরিয়া তৈরি করতে চায়। এখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ থাকবে কি থাকবে সেটা অনুমান করাই যায়।

বার্মা এ্যাক্ট। মিয়ানমারের বিরুদ্ধেবার্মা এ্যাক্ট হয়েছে ২০২৩ সালে। এখানে তারা ইনডিরেক্টলি চারটি ….. কথা বলেছে যারা সাহায্য করছে। সেটা হলো- ….., রাচি, কেয়ান,….. সিথ্রি। এই পুরো বেল্টটাই খ্রিস্টান ডোমিনেটেড। এটাকে যদি আমরা জঙ্গী তৎপরতার ভেতর নিয়ে যাই এটা সম্পূর্ণই ভুল হবে। হোম মিনিস্টারের কথা যদি ধরি- ১০০ জন লোক এতটুকু জায়গায় যার একদিক দিয়ে সাঙ্গু নদী প্রবাহিত, সাঙ্গু নদীর ওপর একটা ব্রিজ আছে যেটা কানেক্ট করে আর বাকি সব চারদিকে পাহাড়। এই ১০০ লোক জড়ো হলো কীভাবে! বাংলা বুঝি না, ওই ভাষা বুঝি না, তাহলে এতদিন ধরে পুলিশ সেখানে কাজ করছে তারা কি কোনো উন্নতি করেনি। কেউই কি ওই ভাষা বুঝে না? ঘটনাক্রমে অনেক প্রশ্ন এসে যায়। আমাদের ফোর্স ইনটেলিজেন্ট, অন্যান্য ইনটেলিজেন্ট অথবা যারা ফোর্স কমান্ড করছেন তারা যদি বলে কিছুই হয়নি- বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেন তাহলে কিন্তু আমরা হোলি আর্টিজানের মতো একটা বড় কিছু দেখবো। এই ঘটনা কীভাবে ঘটলো সেটা বিশ্লেষণ করা উচিত।

ওখানে লোকাল ইনটেলিজেন্স ছিল না। এই ঘটানার পরে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দিনে-দুপুরে থানচিতে বাজারের ভেতর এই ঘটনা ঘটলো। এটাকে যদি আমরা সহেজে নেই, বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলি বা জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত বলি- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছুই হয়নি বলি- তাহলে সেটা ভালো ফল বয়ে আনবে না। এখানে আরাকান আর্মি অপারেট করছে। এখানে চিন ন্যাশানাল আর্মি। সীমান্তের বাইরের কথা বলছি- আমাদের এখানে কুকি চিন ন্যাশানাল ফ্রন্ট, ওইখানে মনিপুর, এখানে মিজোরাম। এই এরিয়ার কথা আমরা বলছি- এখানে যে আরো বড় কিছু হবে না সেটা বলা যায় না। এই অপারেশান দিয়ে তারা যেটা দেখালো, শুধু আমাদেরকে দেখালো না, তারা তাদের অনুসারীদের দেখালো, তারা বম কমিউনিটিকে দেখাল- দেখো আমরা কত প্রভাবশালী। এটা খুবই বিপদজনক। বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্বের কথা যখন আমরা বলি- তখন দেখতে হবে যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কী ডেভেলপমেন্টটা হচ্ছে। ওই এলাকা খুবই দুর্গম। বান্দরবানের মতো এতো দুর্গম জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রামের আর কোথাও নেই।

পার্বত্য অঞ্চলে একটা ব্যাটেলিয়ন কেন। আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে করি তিনটা জেলার জন্য তিনটা ব্যাটেলিয়ন লাগবে। একটা ব্যাটেলিয়ন নিয়ে পর্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে হবে।

আমি যখন রুমাতে ছিলাম তখন সরকারি যে কর্মকর্তা কর্মচারী বদলি হয়ে আসতেন তারা আমার কাছে আসতেন। তাদের একটা কমন প্রশ্ন ছিল- স্যার, আমি কি শাস্তিতে আসছি? তারা পার্বত্য এলাকায় চাকরি করেন তারা মনে করেন এটা তাদের শাস্তি। না হলে এমন দুর্গম জায়গায় তাদের কেন পাঠানো হলো। এখন অবশ্য পার্বত্য অঞ্চল দুর্গম নেই। এখন গাড়ি চলে। অল্প সময় আসা-যাওয়া করা যায়। যেহেতু ওখানে থাকতে হয় সেহেতু অনেক প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করতে হয় আবহাওয়া ও ম্যালেরিয়া তার মধ্যে অন্যতম। আমি বলতাম, আপনি শাস্তিতে নেই আপনি বরং ভালো জায়গাতে আছেন।

যারা রাজনীতি করেন তাদের পাবেন বাজারে। উপজেলাতে খুবই কম পাবেন। খাগড়াছড়িতে পাবেন না, থানচিতে পাবেন না। রোয়াংছড়িতেপাবেন না। আমি যখন ইলেকশান কমিশনার ছিলাম তখন রিকমান্ড করেছিলাম- পার্বত্য জনসম্মতি সমিতি নামে যে পার্টিটা আছে তাদেরকে ন্যাশানাল ইলেকশানে নিয়ে আসা হোক। যাতে সেখানকার রাজনীতিবিদরা ওই এলাকার এমপি হতে পারে। পাবর্ত্য অঞ্চলে কজন রাজনীতিবিদ আছেন, সংগঠন কতটুকু শক্ত আছে। আমি ২০ থেকে ২৫ বছর আগে যা দেখে আসছি এখনো তার থেকে উন্নতি হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আচরণগত পরিবর্তন যদি না আসে তাহলে, সেখানকার মানুষের সাথে রাজনীতি যদি না করা হয় তাহলে তো সুফল আসতে পারে না।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যে রাজনীতি কে নোমিনেশান পাবে আর কে পাবে না, কত চাঁদা কে উঠাতে পারবে তাই নিয়ে যদি ব্যস্ত থাকে তাহলে তাদের সম্পৃক্ততা এই উপজাতীয়দের সাথে কখনোই হবে না। বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। আপনারা ওই অঞ্চলে যান। রুমা জায়গাটা খুব সুন্দর। কিন্তু বাস্তবতা অন্য কথা বলে। কি দুর্গম এলাকা তা বলে বুঝানো যাবে না। ৩৬টা ক্যাম্প ছিল। আমাকে ক্যাম্প টু ক্যাম্প হেলিকপ্টারে যেতে হতো। আমি কমান্ডার হিসেবে হেলিকপ্টারে যেতাম। সবাই তো আর হেলিকপ্টারে যেতে পারতো না। আর বর্ষাকালে বর্ষার আগেই রেশন পৌঁছে দিতে হতো কয়েক মাসের। বর্ষাকালটা আমাদের জন্য, পুলিশের জন্য, র‌্যাবের জন্য যারা অভ্যস্ত নন তাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে উঠতো।

ডিস অ্যাংগেইজ যখন হয় তখন রি অ্যাংগেইজ না হওয়া পর্যন্ত ঠিক হয় না। আমরা অনেক আনন্দে ছিলাম পাহাড়ে কোনো সমস্যা নেই। আমিও গেছি পর্যটক হয়ে।

রাজনীতিতে স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে আসতে হবে। এখন উপজেলাটা ছেড়ে দিতে হবে তোমরা করো। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দল কোনো ছাড় দিতে চায় না। সেখানে ছাত্রলীগ আছে, সেখানে ছাত্রদল আছে, সেখানে জামাত শিবির আছে। কিন্তু স্থানীয় লোকদের রাজনীতির সাথে জড়িত করা যাচ্ছে না।

লেখক: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম. সাখাওয়াত হোসেন
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments