Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদসেন্টমার্টিন চলাচলকারী নৌযান লক্ষ্য করে সশস্ত্রগোষ্ঠীর গুলি

সেন্টমার্টিন চলাচলকারী নৌযান লক্ষ্য করে সশস্ত্রগোষ্ঠীর গুলি

আনুমানিক প্রায় এক দশক আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন স্থানে বঙ্গোপসাগরের মাঝে দুটি স্থানে বালুচর জেগে ওঠে। এই দুটো বালুচরের কারণে ভাটার সময়ে সেন্টমার্টিনে চলাচল করা যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলো সাগরের ভেতর মিয়ানমারের একটি অংশ ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বাংলাদেশের বিজিবির সমন্বয়ের কারণে—এই চলাচলে ইতিপূর্বে কখনোই কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের এই অঞ্চল দখল করে নেওয়ার কারণে সৃষ্ট সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনগামী ট্রলার ও নৌযানগুলোকে লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি গুলি ছুড়ছে। ফলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাণিজ্যিক ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল সাময়িক স্থগিত করার কারণে সেন্টমার্টিনে বসবাসকারীদের মধ্যে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গোলারচর নামক এলাকায় আনুমানিক ২ কিলোমিটারজুড়ে বড় একটি বালুর চর এবং গোলারচর থেকে আনুমানিক ৫-৭ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে নাইক্ষ্যংদিয়া নামক স্থানে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটি বালুর চর ভাটার সময় জেগে ওঠে। ফলে টেকনাফ দমদমিয়া কেয়ারী জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করা যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার, সার্ভিস বোট, স্পিডবোটসহ সব ধরনের নৌযানগুলোকে গমনাগমনের সময় জেগে ওঠা বালুর চরের কারণে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম বাউন্ডারি লাইনের (আইএমবিএল) মিয়ানমার অংশের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা ব্যবহার করতে হয়। বর্ণিত চর দুটি ড্রেজিং করা হলে মিয়ানমারের জলসীমা আর ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।

সেন্টমার্টিনে চলাচল নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা:

গত ১ জুন বিকাল সাড়ে ৩টায় টেকনাফ পৌরসভার নৌকা ঘাট থেকে ১টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে মুদি মালামাল ও ১০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪টার সময় নাইক্ষ্যংদিয়া খাল এলাকা অতিক্রমের সময় আরাকান আর্মি ট্রলারকে লক্ষ্য করে ৬-৭ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ট্রলারটি বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিরাপদে পৌঁছে।

গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনের জিনজিরায় স্থগিতকৃত একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট শাফকাত আলীর নেতৃত্বে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২৭ জন সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে মেটাল শার্ক ও কাঠের বোটযোগে টেকনাফে ফিরছিলেন। পথে নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া চর এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের মেগিচং এলাকা থেকে মেটাল শার্ক ও কাঠের বোটকে লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি গুলিবর্ষণ করলে মেটাল শার্কে ২ রাউন্ড এবং কাঠের বোর্ডে ৪ রাউন্ড গুলি লাগে। পরবর্তীতে ওই বোট এবং মেটাল শার্ক দুটি নিরাপদে টেকনাফ কোস্টগার্ডের বোটপুলে ফিরে আসে।

গত ৮ জুন আনুমানিক ১২টার দিকে নাইক্ষ্যংদিয়া খাল সীমান্তে নাফ নদীর মোহনায় ২টি কাঠের ট্রলার, টেকনাফ পৌরসভাস্থ কাউকখালী ঘাট থেকে সিমেন্ট, রড ও ৬ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাযোগে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাওয়ার পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের মেগিচং ক্যাম্পের ওয়াচ টাওয়ার থেকে আরাকান আর্মি কর্তৃক আনুমানিক ১৫-২০ রাউন্ড গুলি করা হয়। পরে ট্রলার দুটি ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ফিরে আসে। এতে ১টি ট্রলারে ৭ রাউন্ড গুলি আঘাত হানে। এ ঘটনায়ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

১১ জুন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের গোলারচরের বিপরীতে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া খাল সীমান্তে নাফ নদীর মোহনা হয়ে একটি স্পিডবোটযোগে সেন্টমার্টিনের ৫ জন স্থানীয় বাঙালী শাহপরীর দ্বীপ জেটি থেকে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছিলেন। পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের মেগিচং বিজিপি ক্যাম্পের ওয়াচ টাওয়ার এলাকা থেকে আরাকান আর্মি বর্ণিত স্পিডবোটকে লক্ষ্য আনুমানিক ৪-৫ রাউন্ড গুলি করে। এতে স্পিডবোটে অবস্থানরত বাঙালিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যদিও কেউ হতাহত হয়নি। পরবর্তীতে ১১টার দিকে স্পিডবোটটি সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়।

গুলিবর্ষণের এসব ঘটনার কারণে বিগত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৮ হাজার ৪৯২ জন বাসিন্দা বসবাস করে। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে খাদ্য/পণ্য সরবরাহ করা না গেলে এই দ্বীপের বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। কারণ, সেন্টমার্টিনের সাধারণ জনগণ মূলত টেকনাফ থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে জীবন-যাপন করে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে গত ১৩ জুন থেকে কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে বড় বড় ট্রলারে সেন্টমার্টিনে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

জানা যায় যে, নৌযান চলাচল স্থগিত এবং খাদ্য সংকটের পাশাপাশি মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপটির স্থানীয়দের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় প্রশাসন কর্তৃক দ্বীপের স্থানীয়দের আতংকিত না হওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত গুলিবর্ষণের ঘটনা রোধকল্পে আরাকান আর্মির সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়সাধন করা যেতে পারে।

এছাড়াও সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের জন্য টেকনাফের সাবরাং টুরিজ্যম ইকো পার্ক সংলগ্ন সাগর উপকূলে একটি জেটি ঘাট নির্মাণ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, টেকনাফের সাবরাং ইকো পার্ক বিচ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দূরত্ব আনুমানিক ২৪ কিলোমিটার। অপরদিকে বর্তমান জেটিঘাট (দমদমিয়া কেয়ারী জেটিঘাট) থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব আনুমানিক ৩৪ কিলোমিটার। টেকনাফের সাবরাং টুরিজ্যম ইকো পার্ক সংলগ্ন সাগর উপকূলে জেটি ঘাট নির্মাণ করা হলে সেন্টমার্টিনের সঙ্গে টেকনাফের যোগাযোগ সহজ ও কম সময়ে সম্পন্ন হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments