জয় বাংলাদেশ: বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ করা হয়েছে। এক দশকের বেশি সময় আগে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ঘিরে ‘নির্বিচার গুলি করে হত্যা করে লাশ গুম করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে’—আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এমন অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী। এ তথ্য জানিয়ে তাঁর আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, অভিযোগটি গ্রহণ করেছে তদন্ত সংস্থা।
আবেদনে অভিযোগটি কমপ্লেইন্ট রেজিস্টারভুক্ত করে ট্রাইব্যুনাল আইনের বিধান অনুযায়ী তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। আবেদনে ঘটনার তারিখ-সময় হিসাবে ২০১৩ সালের ৫ মে সকাল থেকে ৬ মে রাত পর্যন্ত এবং ঘটনার স্থান হিসেবে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সদস্য মুনতাসীর মামুন ও তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের কথিত মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির এমডি মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, এবি নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমের সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বিজিবির সাবেক ডিজি ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি এম মনজুর আহমেদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে তৎকালীন কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কতিপয় বিজিবি, র্যাব, পুলিশ সদস্য এবং তৎকালীন কয়েকটি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার নীতিনির্ধারকেরা রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরাধের ধরনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের সমূল বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ১ থেকে ২৪ নম্বর আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা শহরব্যাপী ব্ল্যাক আউট করে টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচার গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন।
এ নিয়ে ১৪ আগস্ট থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো এবং এসব সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক চারটি অভিযোগ তদন্ত সংস্থায় জমা দেওয়া হয়েছে।