Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদচলতি বছর ১১ ভূমিকম্প, বাড়ছে ঝুঁকি

চলতি বছর ১১ ভূমিকম্প, বাড়ছে ঝুঁকি

দিনে দিন ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভূমিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাসের ব্যবস্থা নেই।

গত ৭ মাসে দেশে অন্তত ১০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি সেদিন কেঁপে ওঠে সিলেট। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।

৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চট্টগ্রাম। ৫ মে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটির গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

গত ১৬ জুন রাজধানীসহ সারা দেশে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটের দিকে একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঐ ভূমিকম্পে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা কেঁপে ওঠে। মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৫ দশমিক ৫, যা মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এরপর ১৪ আগস্ট আরেক বার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়।

এরপর ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা। দুইদিন পরেই ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত।

এছাড়া ১৮ সেপ্টেমর পর্যন্ত ঢাকা ও এর উত্তরের কয়েকটি জেলায় হালকা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২, যা মাত্রা অনুযায়ী হালকা ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।

অপরদিকে আজ শনিবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এতে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

ভূমিকম্পের এমন ঝুঁকি থাকলেও মোকাবিলার প্রস্তুতি অনেকটাই কম। বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভূমিকম্প ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী মনে করেন, ছোট ও মাঝারি ভূকম্পনে বড় শক্তি বের হওয়ার একটা প্রবণতার লক্ষণ দেখা গেছে। তার মানে, যে কোনো সময় একটি বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। তবে এই বড় ভূমিকম্প কবে হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।

জাতিসংঘ বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা একটি। এছাড়া বাংলাদেশ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত বিধায় প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে মাঝে মধ্যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। উপরন্তু হিমালয় রেঞ্জ হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। যদিও সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের জনগণ শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়নি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments