কুমিল্লা নামটি শুনলেই নানারকম ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। সেখানে অনেক প্রাচীন সভ্যতা রয়েছে। রয়েছে অনেক প্রাচীন ইতিহাস। রয়েছে অনেক প্রাচীন ভ্রমণ স্থান। বেশিরভাগ সময়ে কুমিল্লাকে শিক্ষার সফরের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়। এছাড়াও একদিন ভ্রমণের জন্য কুমিল্লা একটি অসাধারণ সুন্দর জায়গা। কুমিল্লায় বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে যেসব জায়গা যেমন দেখতে যতটা সুন্দর তার সাথে রয়েছে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। এছাড়াও কুমিল্লা খাদি কাপড়, বাটি কাপড় এবং রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত এক জায়গা। আজ কয়েকটি স্থান সমূহ সম্পর্কে জেনে ও ঘুরে আসা যাক।
শালবন বৌদ্ধ বিহার
কুমিল্লায় ভ্রমণ মানেই সর্বপ্রথম যে নামটি মাথায় আসে তা হল শালবন বৌদ্ধ বিহার। শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থিত, যা বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হিসাবে সুপরিচিত। তৎকালীন সময় এই অঞ্চলে শাল ও গজারির বন ছিল বলে বিহারটি শালবন বিহার নামে পরিচিতি লাভ করে। শালবন বিহারটি অনেকটা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো তবে আকারের দিক দিয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার থেকে কিছুটা ছোট। শালবন বিহারটি দেখতে আয়তকার, এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬৭.৭ মিটার। চতুর্দিকে বিহারের দেয়াল প্রায় পাঁচ মিটার পুরু এবং বিহারের কক্ষগুলো চারপাশের বেষ্টনী দেয়ালের সাথে পিঠ করে নির্মিত। বিহারে প্রবেশের জন্য একটি দরজা দেখা যায় যা উত্তর ব্লকের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। বিহারে সর্বমোট কক্ষের সংখ্যা ১৫৫ টি এবং ঠিক মাঝখানে কেন্দ্রীয় মন্দিরকে চিহ্নিত করা যায়। এসব কক্ষে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস করতেন এবং ধর্মচর্চা করতেন বলে মনে করা হয়। কক্ষের সামনের দিকে টানা বারান্দা ও শেষ প্রান্তে দেয়াল দেখা করা যায়। প্রত্যেক কক্ষের দেয়ালে প্রতিমা বা তেলের প্রদীপ রাখার তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে।
নব শালবন বিহার
প্রাচীন সভ্যতায় সমৃদ্ধ কুমিল্লা জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনায় নতুন এক সংযোজন কোটবাড়ি এলাকার নব শালবন বিহার। প্রায় আড়াই একর জায়গার উপর ১৯৯৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নব শালবন বিহার ও বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। শৈল্পিক এই বৌদ্ধ উপাসনালয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম “শান্তি বিহার” হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের উপহার হিসেবে পাওয়া ধাতব পদার্থে তৈরি প্রায় ৬ টন ওজনের ৩০ ফুট উচ্চতার বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয় বিহারে। নব শালবন বিহারে প্রবেশ করলে প্রথমেই সোনালি রঙের বিশাল বৌদ্ধ মূর্তিটি দেখা যায়। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় চকচক করা মূর্তি অনেক দূর থেকেই যে কারো নজরে পড়ে। মূর্তির পাশেই রয়েছে রাজকীয় ভাবে অবস্থানরত একই রঙের দুটি সিংহ। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকা নব শালবন বিহারে সর্ব সাধারণের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।
রানী ময়নামতির প্রাসাদ
কুমিল্লায় ভ্রমণ মানে ময়নামতি দেখা। শিক্ষা সফরের জন্য অন্যতম একটি জনপ্রিয় জায়গা ময়নামতি প্রাসাদ।কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে সৌন্দর্যমন্ডিত রানী ময়নামতির প্রাসাদ অবস্থিত। দশম শতাব্দীতে চন্দ্র বংশীয় রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির আরাম আয়েশের জন্য এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয়, ময়নামতি ইউনিয়নের প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটি ৮ম থেকে ১২শ শতকের এক প্রাচীন কীর্তি।
প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের উত্তর প্রান্তে সমতল থেকে ১৫.২৪ মিটার উচ্চতায় একটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের চূড়ার উপর রানী ময়নামতির প্রাসাদের অবস্থান। স্থানীয়দের মতে, এই স্থানতে একটি ক্রুশাকৃতির মন্দির ছিল, যা পরবর্তীতে সংস্কার করে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ যুগে ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের একটি পূর্বমুখী মন্দির বানানো হয়। এছাড়া প্রাথমিকভাবে এখান থেকে নির্মাণ যুগের ৪টি স্থাপত্য, ৫১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০০ ফুট আয়তনের বেষ্টনী প্রাচীর, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান প্রত্নবস্তু ও অলংকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়েছে।
কিভাবে যাবেন
এর মধ্যে থেকে যে জায়গাতেই যেতে চান না কেন সর্বপ্রথম গন্তব্য হবে কুমিল্লা। তো সর্বপ্রথম কুমিল্লা যাওয়ার পথ অবলম্বন করতে হবে। তারপর কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড বা ট্রেন স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি ধরেই গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।