ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিসর, কাতার ও মার্কিন আলোচকরা গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারা সকলেই চলমান চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হওয়ার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন। মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে।
আলোচনায় ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিষয়টিও স্থান পেয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সাত সপ্তাহ পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সোমবারেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা এর আগে ইসরায়েলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তারা প্রতিটি অতিরিক্ত ১০ জিম্মিকে মুক্ত করার বিনিময়ে অতিরিক্ত একদিনের যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি হবে। পাশাপাশি প্রতিবার ফিলিস্তিনিদের সংখ্যার তিনগুণ ইসরায়েলিকে মুক্তি দিতে হবে। অতিরিক্ত যুদ্ধবিরতি পাঁচদিনের হবে বলে সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েল উভয়ই যুদ্ধে বিরতি বাড়ানোর অনুরোধের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
রোববার হামাস ৪ বছর বয়সী ইসরায়েলি-আমেরিকান মেয়েসহ ১৭ জনকে মুক্তি দিয়েছে। শুক্রবার থেকে মোট ৫৮জনকে মুক্তি দিয়েছে তারা। এর মধ্যে বিদেশিও রয়েছে। ইসরায়েল রোববার ৩৯ ফিলিস্তিনি কিশোর বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, এতে যুদ্ধবিরতির অধীনে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা হয়েছে ১১৭।
বর্তমান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হামাস গাজায় জিম্মি থাকা মোট ৫০ জন ইসরায়েলি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে, যার মানে সোমবার ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া বাকি। তারা কতজন বিদেশিকে মুক্তি দিতে পারে চুক্তিতে তার কোনও সীমা ঠিক করা নেই।
ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, গাজায় এখনও বন্দী মোট জিম্মির সংখ্যা ১৮৪ জন, যার মধ্যে ১৪ জন বিদেশি ও ৮০ জন দ্বৈত নাগরিক রয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই সোমবারের তালিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা সমস্যাগুলো সমাধান করতে ও বিলম্ব এড়াতে তাদের সঙ্গে কাজ করছেন বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা সোমবার মুক্তির জন্য হামাসের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের তালিকা পর্যালোচনা করছে। সম্ভব হলে তারা আরও তথ্য দেবে।
হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেছেন, সংগঠনটি আরও জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবে। হামাস এর আগে বলেছে, তারা গাজায় নিয়ে আসা সমস্ত জিম্মিকে আটকে রাখে নি।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
কাতার, মিসর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও স্পেন সকলেই যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বার্সেলোনায় একটি সম্মেলনের সময় এই সংকট উপস্থাপন করেছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল একই সম্মেলনে বলেছেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ কিন্তু পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হবে।
বোরেল ইসরায়েলকে ‘গাজা পুনঃ উপনিবেশ না করার’ আহ্বান জানিয়ে বলেন, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজায় একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনই ইসরায়েলের শান্তি ও নিরাপত্তার সর্বোত্তম গ্যারান্টি।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেছেন, হামাস শত্রুতা শেষ হওয়ার পর আর গাজা শাসন করতে পারবে না কারণ তাদের ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা’ নেই।