Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeনারীভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রথম বধির আইনজীবী

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রথম বধির আইনজীবী

ভারতের আইনজীবীদের জন্য ইতিহাস গড়েছেন সারাহ সানি। দেশটির সুপ্রিম কোর্টে প্রথম কোনো বধির আইনজীবী হিসেবে তিনি যুক্তিতর্কে অংশ নিলেন। ২৭ বছর বয়সী সারাহকে আদালতে সহযোগিতা করার জন্য সাংকেতিক ভাষার দোভাষী নিয়োগের অনুমতি দিলে গত সেপ্টেম্বরে তিনি প্রথম দেশটির প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়ের সামনে হাজির হন।

৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট সানিকে যুক্তিতর্কে সহযোগিতা করার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে সাংকেতিক ভাষার দোভাষী নিযুক্ত করেন, যা আদালতের ইতিহাসে প্রথম।

বিচারপতি চন্দ্রচূড় বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা ভাবছি, সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানির জন্যও আমরা দোভাষীর ব্যবস্থা করব, যাত সবাই বিচারকাজটি বুঝতে পারে।’

বিশ্লেষকেরা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে সারাহর উপস্থিতি ভারতীয় আইনি ব্যবস্থাকে বধির মানুষদের জন্য আরও অংশগ্রহণমূলক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মেনেকা গুরুস্বামী এ ঘটনাকে ‘সত্যিই ঐতিহাসিক ও স্মরণীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। সারাহর আইনজীবী সঞ্চিতা আইন বিবিসিকে বলেন, সারাহর কাজের ইতিবাচক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকবে। তিনি গতানুগতিক প্রথা ভেঙে উদাহরণ তৈরি করেছেন, এতে আরও অনেক বধির শিক্ষার্থী আইন পড়ায় উৎসাহিত হবেন এবং বধিরদের জন্য আইনি ব্যবস্থা সুগম হবে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা সারাহ দুই বছর ধরে আইনি পেশায় আছেন। শহরের নিম্ন আদালতে সারাহর দোভাষীসহায়তা নেওয়ার অনুমতি ছিল না। কারণ, সেখানকার বিচাপতিরা বলতেন, সারাহ যা বলছেন বা বলবেন, সেসব আইনি ভাষা বোঝার জ্ঞান সাংকেতিক ভাষার দোভাষীদের নেই। তাই তাঁকে লিখে নিজের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করতে হতো।

সুপ্রিম কোর্টে সারাহর দোভাষী হিসেবে কাজ করেন সৌরভ রায়চৌধুরী। আইন বিষয়ে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও আইনজীবী ও আইন বিষয়ের ছাত্রদের জন্য অনুবাদ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সৌরভ জানান, এর আগেও তিনি হাইকোর্টে দুটি মামলায় বধির আইনজীবীর সাংকেতিক দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন।

সারাহ বলেন, এ পর্যন্ত আসতে পেরে তিনি গর্বিত। তিনি বলেন, ‘যাঁরা শুনতে পান না, আমি তাঁদের দেখাতে চাই, আমি যেহেতু পেরেছি, তাঁরাও পারবেন।’

সারাহরা তিন ভাইবোন। তাঁরাও বধির। ভাইটি যুক্তরাষ্ট্রে এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। টেক্সাসে বধিরদের স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আর বোনটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।

সারাহর মা–বাবা অন্য সাধারণ শিশুদের মতোই তাঁদের বড় করেছেন। বিশেষ স্কুলে না দিয়ে পড়িয়েছেন সবার সঙ্গে। সারাহ ক্লাসে ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে ও বন্ধুদের সহযোগিতায় পড়াশোনা করেছেন। তবে কেউ যে তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করেননি, তা নয়।

২০২১ সালে সারাহ বার পরীক্ষায় পাস করে আইনি পেশায় যোগ দেন। মা–বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ সারাহ। তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমাদের সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্য সবার মতো সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের নিয়ে গিয়েছেন।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments