দুই দিনের ব্ল্যাকআউটের পরে মার্কিন চাপের কাছে নত হয়ে ইসরায়েল সীমিত সরবরাহের জন্য পানি শোধনাগার চালু এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালুর অনুমতি দেওয়ার পর জ্বালানির প্রথম চালান গাজায় প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ২৪ লাখ ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্রমবর্ধমান চরম পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ জানানোর পর শুক্রবার দিনের শেষ দিকে মিশর থেকে জ্বালানির প্রথম চালান গাজায় প্রবেশ করেছে।
এ অবস্থায়ও ইসরায়েল স্থল অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গাজার বৃহত্তম হাসপাতালের নিচে হামাসের অপারেশন সেন্টার রয়েছে-এই দাবি করে হাসপাতালে চিরুনি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসনকারী হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান ও স্থল অভিযানে ৫ হাজার শিশুসহ ১২ হাজার লোক নিহত হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি বলেছেন, পানি পরিশোধন সুবিধাগুলো চালানোর অনুমতি দিয়ে শুক্রবার ইসরায়েলের জাতীয় সরকারের মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে দিনে দু’টি জ্বালানী ট্যাংকার গাজায় প্রবেশের সম্মতি দিয়েছে। তিনি বলেন, মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটন কয়েক সপ্তাহ ধরে জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের উপর ব্যাপক চাপ দিয়ে আসছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) বলেছে, দক্ষিণ গাজায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দার বিশুদ্ধ পানির সুবিধা নেই। সেখানে কাঁচা পয়ঃনিষ্কাশন রাস্তায় প্রবাহিত হতে শুরু করেছে।
মার্কিন জ্বালানির অনুমতি দেওয়া হবে, যার মধ্যে ২০ হাজার লিটার ফোন নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধারে জেনারেটরের জন্য নির্দিষ্ট করা হবে।
জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর দুই দিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এবং টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি প্যাল্টেলের জন্য প্রায় ১৭ হাজার লিটারের প্রথম চালান নির্ধারণ করা হয়েছে।
যোগাযোগ ব্ল্যাকআউট হওয়ায় ত্রাণ বিতরণে ব্যাঘাত ঘটে। ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, মানবিক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছেন, এজেন্সিতে জ্বালানি সরবরাহ ‘আমাদের ন্যূনতম মানবিক দায়িত্ব পূরণের জন্য যা প্রয়োজন তার একটি ভগ্নাংশ’।
হামাস শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনারেটরের জ্বালানি না থাকায় ৪৮ ঘণ্টায় ২৪ জন রোগী মারা গেছে।
মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, হামাস হাসপাতাল সুবিধা ব্যবহার করছে এই অভিযোগে ইসরায়েল গাজার উত্তর অংশে হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্য করে অভিযানের বিষয়টি তদন্তের আওতায় এসেছে। চিকিৎসক ও হাসপাতালকর্মীরা ইসরায়েলের দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে।
আহত রোগী এবং আহত শিশু ও নবজাতক শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ আল-শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ইসরায়েলি সেনারা এই সপ্তাহে অভিযান শুরু করে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হাসপাতাল কমপ্লেক্সে রাইফেল, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং একটি টানেলের প্রবেশদ্বার খুঁজে পেয়েছে। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন বলেছেন, গাজায়, ১৫ লাখের বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ইসরায়েলের অবরোধ বেসামরিক নাগরিকদের ‘চরম অনাহারের দিকে’ ঠেলে দিয়েছে।
গাজার অর্ধেকেরও বেশি হাসপাতাল যুদ্ধ, ক্ষয়ক্ষতি ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে আর কাজ করছে না এবং মানুষ স্বাভাবিক রুটির অর্ধেক অংশের জন্য চার থেকে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করছে।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের তাদের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে, কিন্তুমধ্য ও দক্ষিণ গাজায় মারাত্মক বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
এক ফিলিস্তিনি নাগরিক আজহার আল-রিফি এএফপিকে বলেছেন, ‘নিরাপত্তার জন্য আমরা দক্ষিণ গাজায় সরে এসেছি।’ কিন্তু আরেকটি বিমান হামলায় তার পরিবারের পাঁচ বছরের ভাতিজাসহ সাতজন আত্মীয়কে হত্যা করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে, তার মা মারা গেছে, তাই আমার স্বামী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ভাতিজা আমাদের সাথে থাকবেন।’
আল-রিফি বলেছেন,‘আমি উত্তর দিয়েছিলাম: ‘আমি তোমার মা।’ ‘ভোর চারটার দিকে তাকে আমাদের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’