হিমালয় পর্বতমালার তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভারতের সিকিম ও নেপালে অবস্থান হলেও হেমন্তের এই সময় প্রায় প্রতি ভোরেই পঞ্চগড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে তার দেখে মেলে। বরফে ঢাকা শৃঙ্গ ভোরের আলোয় জেগে উঠে সোনালি রং ধারণ করে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দিনের অন্য সময়েও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
এ সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখতে তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকায় বসে প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরাও সেখানে যাচ্ছেন। এই সৌন্দর্য দেখতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন তেঁতুলিয়া থেকে।
কোথা থেকে দেখবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর অবস্থান মহানন্দার পাড়ে। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেশির ভাগ সময় এখান থেকেই আপনি দেখা পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার। এ ছাড়া পঞ্চগড় জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া সেতুতে দাঁড়ালে কিংবা শহরের কোনো উঁচু দালানে দাঁড়িয়েও উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে দেখা পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার পথে সড়ক থেকেও কখনো সামনে, কখনো ডানে আবার কখনো বাঁয়ে দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য।
পঞ্চগড়ে আর কী দেখবেন
পঞ্চগড়ে পর্যটকেরা শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেই আসেন না, গায়ে মাখেন আগাম শীতের হাওয়া। শীত শীত আবহাওয়ায় ঘুরে দেখতে পারেন পঞ্চগড়ের আরও কিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান।
- বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় স্থলবন্দরটির নাম বাংলাবান্ধা। তেঁতুলিয়ায় গেলে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও।
- তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীতে নুড়ি–পাথর তোলার দৃশ্য আপনার ভ্রমণের আনন্দে আলাদা রসদ জোগাবে।
- দেশের একমাত্র সমতলভূমির চা চাষ হয় পঞ্চগড় জেলায়। চা–বাগান ঘুরেও দিনের একটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন।
- পর্যটকদের কাছে পঞ্চগড়ের আকর্ষণীয় জায়গা ও স্থাপনার মধ্যে আরও রয়েছে মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ। এটি দেখতে পাবেন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় গেলে।
আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুরে আছে বার আউলিয়া মাজার। সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। - পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নে আছে সতীর গোড়ালিসমৃদ্ধ বোদেশ্বরী মন্দির। ঢুঁ মারতে পারেন এই মন্দির প্রাঙ্গণেও।
- দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন মন্দিরটির নাম গোলকধাম। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত স্থাপনা। মন্দিরটি শালডাংগা গ্রামে অবস্থিত।
- পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তঘেঁষা ভিতরগড় এলাকায় আছে দেড় হাজার বছরের পুরোনো সুবিশাল মহারাজার দিঘি। এ ছাড়া সেখানে আছে দুর্গনগরী।
- পঞ্চগড়ে দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর ‘রকস মিউজিয়াম’ ঘুরতে দেখতে পারেন। জাদুঘরটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের দোতলা একটি ভবনে।
কীভাবে যাবেন
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে এসি ও নন–এসি বাসে পঞ্চগড়ে যাওয়া যায়। অধিকাংশ বাসের শেষ গন্তব্য থাকে তেঁতুলিয়া। রেলপথেও যাওয়া যায় পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চলাচল করে। পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে চলে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত আকাশপথেও আসা যায়। সেখান থেকে পঞ্চগড়ে আসতে হবে সড়কপথে। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। বাস কিংবা অন্য বাহনে পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরে যাওয়া যায় খুব সহজেই।
থাকবেন যেখানে
পঞ্চগড় জেলা শহরে রয়েছে সার্কিট হাউসসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের গেস্টহাউস। বেসরকারিভাবে সেন্ট্রাল গেস্টহাউস, হোটেল মৌচাক, হোটেল প্রিতম, অগ্রদূত প্যালেস, এইচ কে প্যালেস, ধানসিঁড়িসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে পঞ্চগড়ে।
তেঁতুলিয়ায় রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও বাংলো। মহানন্দা নদী ঘেঁষে উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত শতবর্ষ পুরোনো তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো। ব্রিটিশ আমলের এই ডাকবাংলো বর্তমানে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো হিসেবে পরিচিত। আগেভাগে যোগাযোগ করে এই ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। পুলিশের অফিসার্স মেস, উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্স, সড়ক ও জনপদের গেস্টহাউস, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গেস্টহাউস, বন বিভাগের গেস্টহাউস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের গেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা আছে।
এ ছাড়া তেঁতুলিয়ায় বেসরকারিভাবে হোটেল দোয়েল, স্কয়ার হোটেল, স্বপ্ন গেস্টহাউস, কাঠের বাড়ি গেস্টহাউস, হোটেল সীমান্তের পাড়, হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাজী ব্রাদার্স এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও পরিচালিত মহানন্দা কটেজসহ রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল।