‘তাই আমি বলে যাই/ কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে হৈমন্তী আসে/ এই বাংলায় মায়াভরা মানুষকে ভালোবেসে/ কাঁচাধান পাকা হয়ে, আসে কৃষকের ঘরে/ কুয়াশার চাদরে মোড়ানো হেমন্তের আগমনে’
কবি জীবনানন্দের এই কথাগুলো কতটা বাস্তবিক তা শহুরে মানুষের বোঝার জো নেই। বাংলায় হেমন্ত আসে প্রতিবছর। তার রূপ বুঝতে পারে গ্রামের মানুষ। গ্রামেও কিছুটা শহরের রূপ এসেছে। তারপরও প্রকৃতি এই কৃত্রিমতা ভেদ করে উঠে আসতে চায় নিজেকে ঘোষিত করতে। তার মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই খোয়াবের বহিঃপ্রকাশে। মানুষের ভিড়ে মানুষের ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে হেমন্তের আগমন। ফসল তোলার ধুমে এই কুয়াশার আবরণে সারারাত ধরে ভেজা মাঠে প্রথমবার পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় অন্যরকম এক অনুভূতির, হলুদ ফুলের সৌরভে উদাসীন করে অতীতের কথা ভুলিয়ে দিতে হেমন্তের আগমন। কুয়াশার চাদরে ঢেকে দিয়ে সবাইকে জড়িয়ে ধরে সে।
পোশাকে যখন বর্ণের সমারোহ ঘটে সেখানে যুক্ত হয় আনন্দ। এই আনন্দে সামিল হওয়ার সুযোগ সবাই নেওয়ার চেষ্টা করতেই পারে। বছর বদলায়। প্রতিবছর যুক্ত হয় নতুন ট্রেন্ড। ফ্যাশন সময়কেও যেন টপকে দ্রুত বদলে যায়। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে যে মেলবন্ধন, তাকে এত দ্রুত বদলানো যায় না।
প্রচণ্ড গরম, ঘাম, অস্বস্তির বদলে এখন চারপাশে বইছে হিমেল আমেজ। হেমন্ত এমনই। হেমন্তের ফ্যাশন আউটফিটে শীতের পোশাক আস্তে আস্তে ইনকরপোরেট করতে হয়। গরমের পোশাক এই সময়েও আপনি ফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত করে নিতে পারেন। মোটা সুতি কাপড়ের পোশাক, জিন্সের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, জিন্সের প্যান্ট, স্কার্ট, জ্যাকেট, বুটজুতা, টাইস ও স্কার্ফ দিয়ে সহজেই হেমন্তের সাজে রাঙিয়ে নেওয়া যায় নিজেকে।
পোশাক
হেমন্তে ভোরে ঠান্ডা বাতাস যেমন থাকে সকাল দশটার পর তেমন থাকে না। তাই এমন পোশাক বাছাই করে রাখতে হবে যেটিতে বেশি ঠান্ডা বা গরম কোনোটিই অনুভূত না হয়। দাওয়াতে পরতে পারেন স্টাইলিশ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এই সময় শাড়িই অনেকের পছন্দ। যেকোনো উপলক্ষ্য পেলেই শাড়ির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। তবে প্রথমে রেগুলার পোশাকের কথাই আলোচনা করা যাক। স্লিভলেস কিংবা হাফ স্লিভের চেয়ে ফুল স্লিভ পোশাক এখন বেশি আরামদায়ক। দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্র কিংবা বাইরে যাওয়ার জন্য জর্জেট, সিল্ক, তসরসহ বিভিন্ন ধরনের সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক মন্দ হয় না। বিশেষত জর্জেটের ওয়েস্টার্ন ধাঁচের দেশীয় কুর্তি, টপস বা টিউনিক রেগুলার আউটফিট হিসেবে এখনকার আবহাওয়া উপযোগী এবং স্টাইলিশ লুক আনবে। নেট কাপড়ের লং কামিজ, টপস-স্কার্টের সঙ্গে জর্জেট কিংবা নেটের জ্যাকেট, টপস-টিউনিকের সঙ্গে স্কার্ফ, ফুল স্লিভ শ্রাগ পরতে পারলে মন্দ হয় না। হাফ স্লিভ কিংবা স্লিভলেসের বদলে আঁকাবাঁকা বড় কুঁচির বা ডাবল পার্টের কুঁচির ডিভাইডার হাতা, বেলবটম, টিউলিপ, ফ্রিল দেওয়া হাতাসহ বিভিন্ন শেপের ফুল স্লিভ এবং থ্রি-কোয়ার্টার হাতা আপনার লুককে রাঙাবে তো অবশ্যই। একই সঙ্গে দেবেও না কোনো অস্বস্তি। রঙের ক্ষেত্রে হেমন্তের তালিকায় রাখতে পারেন লেমন, হালকা হলুদ, বাদামি, পিচ, সবুজ, লাল, গোলাপি, বেগুনি, ব্লুসহ বিভিন্ন রং।
উজ্জ্বল ও গাঢ় রং, যেমন কালো, গাঢ় নীল, গাঢ় কমলা, গাঢ় ম্যাজেন্টা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের গাঢ় রঙের পোশাক পরার এখনই সময়। এ সময়ে হালকা রং মানানসই নয়। সালোয়ার কামিজে জিওমেট্রি আর ফ্লোরালের আধিক্য এখন বেশি। আর ফ্লোরাল এই সময়ে মানায়ও বেশ। খাদি, সিল্ক, জর্জেট, লিনেন, কটন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাঁতের কাপড়। এ ধরনের কাপড়ে নকশার জন্য যোগ করা হয় স্ক্রিন, ব্লক, এমব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন ভেলুয়েশন। তাই হেমন্তের আয়োজনে এই ধরনের পোশাক অকেশনের জন্য একদম রেডিমেড।
সাজসজ্জা
হেমন্তে ওয়াটারবেজড সাজসজ্জাই মানানসই বেশি। রাতে বেজড মেকআপে তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। তবে আগে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে নিতে হবে। মেকআপ ভালোমতো বসানোর জন্য মুখে বুলিয়ে নিতে হবে ফিনিশিং পাউডার। যেহেতু হেমন্তে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে তাই মেকআপ হতে হবে শাইনি ও শিমারি। চোখ যদি জমকালো হয়, ঠোঁটে থাকবে হালকা রং। এ ঋতুর আদর্শ গ্লসি লিপস্টিক। সেগুলো হতে হবে একটু চকচকে, ফ্রস্টেড ও মৃদু রঙের। ধুলাবালু আর দূষণ থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলায় চুলগুলোকে ডোনাট বান, পনিটেইল বা স্টাইলিশ কোনো ঢঙে বেঁধে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ত্বক টেনে গেলে তৈলাক্ত ও শিমারিবেজড মেকআপ করা যেতে পারে।
চোখের সাজ হতে পারে স্মোকি। হেমন্তে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার না করাই ভালো। খুব গ্লেসি আর ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ লিপস্টিক ব্যবহার করুন। বছরের এই সময়টায় চুল নিয়ে আপনাকে একটু বেশি চিন্তা করতে হবে, কারণ এই সময়টায় প্রচুর ধুলোবালি থাকে তাই চুল বেঁধে রাখুন। চাইলে ডোনাট বান কিংবা পলিটেইল করে রাখতে পারেন।