ফিফা দুই প্রীতি ম্যাচে সিংগাপুরকে হারিয়ে ছুটিতে গেছেন নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। জাতীয় নারী দলের স্ট্রাইকার তহুরা খাতুন দুই ম্যাচে দুটি করে চার গোল করেছেন। গোলের হিসাবে তহুরা সর্বোচ্চ গোলদাতা। চার গোলের মালিক। নীরবে নিঃশব্দে তহুরা খাতুন ৫০ গোল পূর্ণ করলেন।
সিংগাপুর ম্যাচের আগে গোলের সংখ্যাটা ছিল ৪৬। কমলাপুর স্টেডিয়ামে ১ ডিসেম্বর প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করে সংখ্যাটা হয় ৪৮। একই মাঠে ৪ ডিসেম্বর সিংগাপুরের বিপক্ষে আবার তহুরা জোড়া গোল করে ৫০ পূর্ণ করেন। তহুরা বললেন, ‘অপেক্ষায় ছিলাম কবে ৫০ গোল করতে পারব। আমি তো ভাবতেও পারিনি, ৫০ গোল হবে।’ কিন্তু এমন ভাবনা কেন এসেছিল? তহুরা বললেন, খেলা না থাকলে কি করব। খেলা হলে গোল করার সুযোগ নেওয়া যায়। আর আমিও একটা সময় খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। যাক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’
গোলের হিসাব কিংবা অন্য কোনো হিসাব খুব একটা না রাখলেও প্রাথমিক হিসাবটা পরিষ্কার মনে আছে তহুরা খাতুনের। বললেন, ‘আমি অত হিসাব-টিসাব রাখতে পারি না। সিংগাপুরের বিপক্ষে চার গোল করে ৫০টা হয়েছে, আর হ্যাটট্রিক আছে অন্যান্য ম্যাচে।’ তহুরা বললেন, ‘তাজিকিস্তান, ইরান, হংকংয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক রয়েছে। ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচেই গোল আছে ৪টা। হ্যাটট্রিক হবে ৬-৭টার মতো।’ কত ম্যাচে ৫০ গোল? তহুরার সাফ জবাব, ‘এইটা আমি বলতে পারব না। আমার কাছে হিসাব নাই। কিছু লেখা ছিল। এখন নাই।’
ময়মনসিংহ কলসিন্ধুরের মেয়ে তহুরা খাতুন। ফুটবলার হতে গিয়ে জীবনে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন। ফুটবল খেলে যতটা পেয়েছেন তাতে খুব খুশি তহুরা। কিন্তু তার শারীরিক গড়নের কারণে এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে লড়াই করে পেরা উঠা কঠিন হয়ে যায়। অসীম ধৈর্য শক্তি আর কোচদের প্রেরণায় বিশেষ করে জাতীয় নারী দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুর সহযোগিতায় ফুটবল ছেড়ে যেতে পারেননি তহুরা খাতুন। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্যারিয়ার শুরু করেন এই খেলোয়াড়। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নেপাল, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড সফর করেছেন।
২০১৫ সালে প্রথম বার নেপালে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেটা আজও ভুলতে পারেননি তহুরা খাতুন। ৯ বছর পরও নেপাল সফরের সেসব ঘটনা আজও চোখে ভেসে উঠে। কী ঘটনা ছিল? নেপালের যাওয়ার জন্য প্রথম বার বিমানে উঠেন তহুরা। এর আগে কোনো দিন বিমানবন্দরেই যাওয়া হয়নি, সেই মেয়েটি হঠাৎ বিমানে উঠতে যাচ্ছেন। ভয়ে কাঁপছিলেন। স্কেলেটরে উঠতে গিয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে যান।
তহুরা বললেন, ‘আমাদের একজন ম্যাডাম এসে লিফটে উঠান। প্লেন যখন ছাড়ল আমি ঘুম। রান করে উপরে উঠতেই….। ভয় পেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। এক ঘুমে দেখি অন্য এক শহর-বললেন তহুরা খাতুন। আরো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিলেন তহুরা খাতুন। সেবার কাঠমান্ডুতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। আমরা আটকা পড়েছিলাম। পরে আমাদেরকে বিশেষ বিমানে ঢাকায় আনা হয়। সেই ভয়াবহতার কথা কোনো দিনও ভুলব না। হইছে, কথা শেষ করেন, আমি ব্যাংকে যাব আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।’