ইসলামি দাওয়াত মানব জাতির পরিবর্তন ও হেদায়াতের জন্য প্রয়োজন। আর এই মানব জাতির মঙ্গলের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবি-রসুল এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সেই নবি-রসুল মানব জাতীর কাছে গিয়ে মহান প্রভুর পরিচয় তুলে ধরে ইসলামের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। সত্ কাজের আদেশ, অসত্ কাজের নিষেধ প্রদান করাই ছিল নবি-রসুলদের কাজ। সব নবিই তার উম্মতকে তাওহিদ ও ইবাদতের আদেশ করেছেন এবং শিরক ও বিভিন্ন পাপ কাজে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে রসুলের, যিনি উম্মি নবি; যার উল্লেখ তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজিলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদের সত্কাজের নির্দেশ দেন এবং অসত্কাজ থেকে নিষেধ করেন’। (সুরা আরাফ-১৫৭)
ইসলামি দাওয়াত প্রদান করা তথা সত্ কাজে আদেশ ও অসত্ কাজে নিষেধ করা সব মুসলমানের ওপর অবশ্য কর্তব্য। উম্মতে মোহাম্মদির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দিন প্রতিষ্ঠা বা নসিহতের দায়িত্ব। এই দিনি দাওয়াত যে ব্যক্তি পালন করবে, সে সফলতা অর্জন করবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর তারাই সফলকাম’। (সুরা ইমরান-১০৪)
প্রত্যেক ব্যক্তির আওতাধীন সব লোকের ওপর দিনি দাওয়াত দেওয়া অবশ্যক। পরিবারের কর্তার জন্য তার স্ত্রী-সন্তানদের দিনের দাওয়াত দিয়ে ইসলামের শারিয়া মোতাবেক পরিচালনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধানগণ তার সহকারী ও শিক্ষার্থীদের, মিল-ফ্যাক্টরি বা বিভিন্ন গার্মেন্টস বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, এলাকার মেম্বার-কমিশনার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী কিংবা শাসকগণ যার যার অধীনস্থ সবাইকে সত্কাজের আদেশ ও অসত্ কাজের নিষেধ প্রদান করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়ের জন্য দাওয়াত দেবেন। কেননা, রসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং তোমাদের প্রত্যেকেই অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (বুখারি শরিফ)
দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে কাউকে ছোট করা যাবে না। সুন্দর ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ সম্পাদন করতে হবে। কখনো কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবা ঠিক হবে না। সর্বদা ভুলত্রুটি থেকে সচেতন থাকতে হবে। ভুল হলে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কোনো ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ অন্তরে স্থান দেওয়া যাবে না। সবাইকে বন্ধু ভেবে দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি এমন উত্তমভাবে মন্দের মোকাবিলা করবে, যাতে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে, সে-ও প্রাণের বন্ধু হয়ে যায়।’ (সুরা হামিম সাজদাহ, আয়াত:৩৪)।
লেখক : আন্তর্জাতিক ইসলামি বক্তা ও মুফাসসিরে কোরআন