ইরান তার শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। প্রায় চার বছর আগে এই জেনারেলকে ড্রোন হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়। দেশটির বিচার বিভাগ বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে। খবর এএফপির।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি ড্রোন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি (৬২) ও ইরাকি লেফটেন্যান্ট আবু মাহদি আল-মুহান্দিস ৩ জানুয়ারী, ২০২০ তারিখে নিহত হন।
কয়েকদিন পরে ইরান ইরাকের ঘাঁটিতে আমেরিকান ও অন্যান্য জোটের সেনাদের বাসস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে প্রতিশোধ নেয়। তবে হামলায় কোন মার্কিন কর্মী নিহত হয়নি। কিন্তু ওয়াশিংটন বলেছে, ডজন ডজন সেনা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
ইরানের বিচার বিভাগের বার্তা সংস্থা মিজান জানিয়েছে, তেহরানের একটি আদালত ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি ইরানিদের দায়ের করা মামলার পরে বস্তুগত, নৈতিক ও শাস্তিমূলক ক্ষতি হিসেবে মার্কিন সরকারকে ৪৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার জরিমানা প্রদানের শাস্তি দিয়েছে।
আদালত ট্রাম্প, মার্কিন সরকার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপারসহ ৪২ জন ব্যক্তি ও আইনী ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
কাসেম সোলেইমানি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের বিদেশি অপারেশন শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব যিনি মধ্যপ্রাচ্য অভিযানে ইরানের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের নায়ক হিসেবেও দেখা হয়।
ইরানের আদালত এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেশ কিছু রায় দিয়েছে। গত মাসে ইরানের একটি আদালত মার্কিন দূতাবাসে আটক জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের একটি নিষ্ক্রিয় অপারেশনের শিকারদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মার্কিন সরকারকে ৪২০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আগস্টে তেহরানের একটি আদালত ওয়াশিংটনকে ১৯৮০ সালে নতুন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার’ জন্য ৩৩০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেছিল। এই মামলাগুলো মূলত মার্কিন আদালতে তেহরানের বিরুদ্ধে দেওয়া বহু বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের রায়েরই প্রতিক্রিয়া।
২০১৬ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ করা ইরানি সম্পদগুলো হামলার শিকার ব্যক্তিদের দিয়ে দেওয়া উচিত। তেহারেন ওপর দায়ের করা অভিযোগের মধ্যে ছিল ১৯৮৩ সালে বৈরুতে একটি মার্কিন মেরিন ব্যারাকে বোমা হামলা ও ১৯৯৬ সালে সৌদি আরবে বিস্ফোরণ ঘটানো। তেহরান সব হামলার দায় অস্বীকার করেছে।
বেশ কিছু ইরানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা খোলার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে আবেদন করেছে তেহরান। মার্চে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস রায় দেয়, ওয়াশিংটনের মাধ্যমে তহবিল ফ্রিজ করা ‘স্পষ্টত অযৌক্তিক’।
তবে রায়ে এটিও বলা হয়েছে, ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র যা ফেরত দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।