২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের নিয়মিত খেলোয়াড় টাঙ্গাইলের কৃষ্ণা রাণী সরকার। নারী ফুটবলে যতটা সফলতা রয়েছে তার প্রত্যেকটিতে অবদান রয়েছে কৃষ্ণার। ইতিহাস গড়া সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশকে ট্রফি উপহার দিয়েছেন কৃষ্ণা। সেই কৃষ্ণা এখন পায়ে সমস্যার কারণে মাঠের বাইরে। তিন মাস বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে। বিশ্রামের পর কৃষ্ণা মাঠে ফিরতে পারবেন কি না তার গ্যারান্টি নেই।
কারণ পায়ে এমন এক সমস্যা হয়েছে সেটা পুরোপুরি সুস্থ না হলে খেলা সম্ভব না। ডান পায়ের মধ্যে তিনটি আঙুল শুকিয়ে গেছে। স্যান্ডেল খুলে নিজের পা দেখালেন কৃষ্ণা। শুকিয়ে যাওয়া আঙুলের সঙ্গে পায়ের অন্যান্য আঙুলের মিল নেই। কৃষ্ণা বললেন, ‘এই তিনটা আঙুলের রগ শুকিয়ে চিকন হয়ে গেছে। রংটাও বদলে গেছে।’ অবস্থার পরিবর্তন না হলে কৃষ্ণা আর কখনোই ফুটবল খেলতে পারবেন না। তার ফুটবল ক্যারিয়ার এখন সংকটাপন্ন। দেশে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফায়দা হয়নি। বিদেশে চিকিত্সা নিতে পারলে সুফল পেতেন দ্রুত। কৃষ্ণাকে চিকিৎসকরা তিন মাস বিশ্রাম নিতে বলেছেন। শুকিয়ে যাওয়া আঙুলের পা দিয়ে ফুটবল খেলা যাবে না। কৃষ্ণা আহত পা-টাকে আগলে রেখে শরীরের বাকি অংশটা খেলার স্বার্থে ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কৃষ্ণা জানালেন দেবাশিষ স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি আমাকে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বললেন।
এছাড়াও কয়েক দফা চিকিৎসা করানো হয়েছে কৃষ্ণার পায়ে। ব্যথা কমানোর জন্য পেইন কিলার খেয়েছিলেন। স্টরয়েড দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা করেও কোনো লাভ হয়নি। কৃষ্ণা জানালেন, ‘হাঁটতে পারতাম না। ব্যথা ছিল। ব্যথা নিয়েই ফুটবল খেলেছি। খেলতে হবে তাই অনেক কিছু মানতাম না। একাধিক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। আসলে এই পা ওভার ইউজ হয়েছে, স্টরয়েড দেওয়া হয়েছিল। ব্যথা কমানোর জন্য। স্টরয়েড দেওয়ার পর পাঁচ ছয় দিন ভালো যায়, আবার ব্যথা শুরু হয়। চীনে এশিয়ান গেমসে যাওয়ার আগে ইনজেকশন দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। না না, একটা ম্যাচ খেলেছি শেষ সাত আট মিনিট। আমি আসলে বিশ্রামেই ছিলাম। ঢাকায় ফিরে দেখি আরও ব্যথা হচ্ছে।’ স্টরয়েড দেওয়াটাই নাকি কৃষ্ণার জন্য ভুল হয়েছে। কৃষ্ণা বললেন, ‘পরে বুঝলাম স্টরয়েড দেওয়াটাই ভুল ছিল। কিন্তু যখন স্টরয়েড দেওয়া হয়েছিল তখন ভালো ছিলাম। গেম খেলতে হবে তাই দেওয়া হয়েছিল।’
কৃষ্ণা বললেন, ‘কয়েক বার ডাক্তার পরিবর্তন করা হয়। শেষ বার ডাক্তার পরিবর্তনে একটা আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। তখনই আমার টেন্ডনে সমস্যা ধরা পড়ে। ডাক্তাররা বলেছেন বিশ্রাম নিয়ে শুকিয়ে যাওয়া রগগুলো আগের মতো জাগিয়ে তুলতে হবে।’ তিন মাস বিশ্রাম নিলেই কি কৃষ্ণা আবার মাঠে ফিরতে পারবেন? কৃষ্ণা বললেন, ‘ডাক্তার বলেছে তিন মাস বিশ্রাম নিতে। আগে বিশ্রাম নিয়ে দেখি। এই বিশ্রাম আগেই নেওয়া উচিত ছিল।’
এখান থেকে সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরাটা কৃষ্ণার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জর ব্যাপার। তার চোখে মুখে অন্ধকার। ফুটবল ক্যারিয়ার বাঁচবে কি না, সেই প্রশ্নে মুখে হাসি থাকলেও মনের মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছে সাফজয়ী এই ফুটবলারের। বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে তাতে কৃষ্ণা আরও দ্রুত মাঠে ফিরতে পারতেন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে আবার মাঠে ফিরছেন খেলোয়াড়রা। বাফুফে চাইলে সেটি করতে পারে। বাফুফে যদি সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাহলে কী কৃষ্ণা যাবেন? ‘এখানে তো আমি সবই পাচ্ছি। আর যদি বিদেশে পাঠানো হয় তাহলে যাব না কেন। আমাকে তো দেশের বাইরে চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে—বললেন কৃষ্ণা।