Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeধর্মইসলামে অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা

ইসলামে অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা

ইসলাম একদিকে যেমন মানুষকে কোনো ধর্ম গ্রহণ করা বা না করার স্বাধীনতা প্রদান করেছে, অন্যদিকে যে কোনো মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করারও অধিকার দিয়েছে। কিন্তু জোর-জবরদস্তি করে কাউকে ধর্মে প্রবেশ করানো অবৈধ ঘোষণা করেছে। মদিনার আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তির দুই পুত্র রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের পূর্বে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। অতঃপর পুত্রদ্বয় যখন মদিনায় আগমন করে, তখন তাদের পিতা তাদের বল প্রয়োগ করে ইসলামে প্রবেশ করাতে চাইলে তারা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করে। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আয়াত নাজিল হয়, ‘দিনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। কেননা, ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথ দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত-২৫৬)।

কেউ কেউ বলেন, উক্ত আয়াতে কারিমার বিধান পরবর্তী সময়ে নাজিলকৃত কিতালের নিম্নোক্ত আয়াতে কারিমা দ্বারা মানসুখ বা রহিত হয়ে গিয়েছে, ‘হে নবি! আপনি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করুন। তাদের চূড়ান্ত পরিণতি জাহান্নাম এবং পরিণতি হিসেবে তা অত্যন্ত দুঃখময় স্থান।’ (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত-৯)। মূলত কিতাল-সংক্রান্ত আয়াতে কারিমা ঐ সব লোকের জন্য প্রযোজ্য, যারা ইসলামের ক্ষতি সাধন করে। মূল কথা হলো, ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার জন্য কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর ধর্ম নিয়ে তালবাহানা করারও কোনো সুযোগ নেই।

আরব পৌত্তলিকদের মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি চরম নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তাদের সঙ্গে শক্তি প্রদর্শনের কোনো পন্থাই অবলম্বন করেননি। কেননা, তিনি নিজের ও অন্যদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন। যেমন- আল্লাহ রব্বুল আলামিন নবি কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে নবি! আপনি মুশরিকদের বলে দিন, তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম এবং আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম।’ (সুরা আল-কাফিরুন, আয়াত-৭)। অন্য আয়াতে কারিমায় বলা হয়েছে, ‘হে নবি! আপনি পরিষ্কার বলে দিন, এই হচ্ছে সত্য, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। এখন যে চায় তা গ্রহণ করুক এবং যে চায় অস্বীকার করুক। আমি জালিমদের (অস্বীকারকারী) জন্য জাহান্নাম অবধারিত রেখেছি।’ (সুরা আল-কাহফ, আয়াত-২৯)।

মানুষ তার কৃতকর্মের কারণেই পাপ-পুণ্যের অধিকারী হবে। এক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার কোনো সুযোগ নেই। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমেই অন্য ধর্মালম্বীদের মন জয় করতে পারে। এই মর্মে রসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘হে নবি! আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের শাসক নন।’ (সুরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত-২১-২২)।

বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন মানুষের মর্যাদার জন্য অপরিহার্য, তেমনি তা ইসলামের ন্যায় একটি জীবনাদর্শের পক্ষে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য শক্তি প্রয়োগের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন পছন্দনীয় পন্থায়।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত-১২৫)। আবার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মন্দের জবাবে তা-ই বলুন, যা উত্তম।’ (সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত-৯৬)। এছাড়া মুসলমানদের খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের শূকরবধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের মদের পাত্রও ভেঙে ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, তারা শূকরের মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপানে অভ্যস্ত। অনুরূপভাবে ইসলাম অমুসলিমদের তাদের ব্যক্তিগত ক্রিয়াকর্ম পালনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। যেমন তাদের বৈবাহিক বন্ধন, তালাক, উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি।

ইসলামে অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে নিম্নোক্ত ঘটনা অতি চমকপ্রদ :একদা নজরান গোত্রীয় খ্রিষ্টানদের একদল দূত রসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আগমন করে। তারা আসরের নামাজের পর মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে। তখন তাদের উপাসনার সময় উপস্থিত হয়। তারা উপাসনার জন্য দণ্ডায়মান হলে কতিপয় মুসলমান তাদের বাধা প্রদানের চেষ্টা করলে রসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন এবং বললেন, তাদের উপাসনা করতে দাও। এরপর তারা পূর্বমুখী হয়ে তাদের উপাসনা সম্পন্ন করল।

ইসলামে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রতিফলন দেখা যায়। ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমরা সুন্দরভাবে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে। মুসলমানগণ যখনই কোনো দেশ জয় করত, তখন অমুসলিমদের তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার সুবন্দোবস্ত করে দিত। মুসলমানগণ অমুসলিম বিজয়ীদের ন্যায় পরাজিতদের জোরপূর্বক তাদের ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা কখনো করেননি। ইতিহাসে এর বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। হিন্দুস্তানে সর্বদাই অমুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তদুপরি মুসলমানগণ ৮০০ বছর হিন্দুস্তান শাসন করেছে। অন্যদিকে স্পেনে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ লাখ। কিন্তু অমুসলিমদের হাতে স্পেনের শাসনভার চলে যাওয়ার পর এখন সেখানে মুসলমান নেই বললেই চলে।

মহাবীর সালাহউদ্দিন আইয়ুবির সময় বায়তুল মাকদাস জয় হওয়ার পর তিনি সব খ্রিস্টানকে সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন। এভাবে মুসলমান কর্তৃক বিজিত দেশসমূহে অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলমানদের সন্ধিসমূহের চুক্তিনামা পড়লেই সহজে মুসলমানদের বদান্যতা ও পরমতসহিষ্ণুতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের এই বদান্যতা ও সহনশীলতার দ্বারাই ইসলামের এত বিস্তৃতি লাভ ঘটেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments