ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে সহজে বিদেশ সফরও করতে পাচ্ছেন না তিনি। ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে জি-টোয়েন্টি বৈঠকে পুতিনের বদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বুধবার জি২০ গোষ্ঠীর ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকে তিনি যোগ দিয়ে সরাসরি একাধিক বিশ্বনেতার রোষের মুখে পড়লেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
জি২০ ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, তিনি পুতিনকে সরাসরি ইউক্রেনের ওপর হামলা বন্ধ করে সেখান থেকে সব রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের ডাক দিয়েছেন। অবশেষে এই যুদ্ধ শেষ করার ওপর জোর দেন তিনি।
বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে শলৎস বলেন, একাধিক জি২০ নেতা পুতিনকে একই বার্তা দিয়েছেন। তাঁকে সে সব কথা শুনতে হয়েছে। উল্লেখ্য, এই লোকচক্ষুর আড়ালে এই ভার্চুয়াল বৈঠক সম্পর্কে জানতে অংশগ্রহণকারী নেতাদের বিবৃতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
বার্লিন সফররত ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি শলৎসের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, মস্কো ত্যাগ করতে না হওয়ায় পুতিনের পক্ষে এই সম্মেলনে যোগ দেওয়া সহজ হয়েছে। পুতিন ইউক্রেনে শান্তির যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়ে মেলোনি বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না ইউক্রেন সংকটে এক পক্ষ হামলাকারি এবং অন্য পক্ষ আক্রান্ত হয়েছে। মেলোনির মতে, দখল করা ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করা রাশিয়ার জন্য সহজ।
রাশিয়াও জি২০ বৈঠক সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছে। বেশ কয়েকজন নেতা যে তাদের বক্তব্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার লাগাতার হামলা সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করেছেন, ক্রেমলিন তা অস্বীকার করে নি। পুতিন নিজেও বলেন, যে যুদ্ধ সব সময় ট্র্যাজিডি বহন করে আনে। তার দাবি, রাশিয়া কখনো শান্তি আলোচনার পথ বন্ধ না করলেও ইউক্রেনই অনড় অবস্থান দেখিয়ে চলেছে।
তিনি ২০২৪ সালে কিয়েভে ইউরোপ-পন্থি বিক্ষোভকে ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করে সেই ঘটনাকেই বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী করেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সমস্যা ও বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতির জন্য তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে দায়ী করেন।
পুতিনের মতে, করোনা সংকটের সময়ে কয়েক হাজার কোটি মার্কিন ডলার ও ইউরো বিশ্ব অর্থনীতিতে ঢালার কারণে বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে, যার ফলে বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর সমস্যা হচ্ছে। তিনি রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের কড়া নিষেধাজ্ঞাকেও বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী করেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ডাক সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেন নি রুশ প্রেসিডেন্ট।