খরগোশময় দ্বীপ। যতদূর চোখ যায়, শুধু খরগোশ আর খরগোশ। যদি কখনও ভুলেও সেখানে চলে যান, তাহলে অনায়াসে আপনি এসব খরগোশের মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন।
হিরোশিমা থেকে মাত্র অর্ধশত কিলোমিটার দূরে এই ওকুনোশিমা দ্বীপের অবস্থান। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘উসাগি শিমা’। বাংলায় যাকে বলে- ‘খরগোশের দ্বীপ’।
রাশিয়া-জাপান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত ওকুনোশিমা দ্বীপটি ছিল একটি কৃষিভূমি। যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা বাড়াতে দ্বীপটিতে ১০টি দুর্গ নির্মাণ করে জাপান। সেই থেকেই দ্বীপটি সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে।
দ্বীপটির ইতিহাস
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষায় ব্যবহৃত হতো দ্বীপটি। ১৯২৯ সালে এখানে একটি গ্যাস কারখানা তৈরি হয়। তাতে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস তৈরি হতো। এই গ্যাস যুদ্ধক্ষেত্রে জাপানের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতো। চীন-জাপান যুদ্ধে এসব গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এমনকি বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন সব রাসায়নিক পুড়িয়ে ফেলা হয়। এমনকি দ্বীপটি জাপানের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার চেষ্টাও হয়েছিল। জনসাধারণের আনাগোনাও নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দ্বীপে। কারণ দ্বীপটির বাতাসে ভেসে বেড়াত বিষাক্ত গ্যাস।
অনেক দিন পর দ্বীপটি মানুষের বসবাসের উপযোগী কিনা, সেটি পরীক্ষা করতে সেখানে কিছু খরগোশ ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও অনেকে মনে করেন, ১৯৭১ সালে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ওকুনোশিমায় বেড়াতে এসেছিলেন। তারা আটটি খরগোশ ছেড়ে দেন সেখানে। তারপর খরগোশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক সময় সেটি খরগোশের দ্বীপ হয়ে ওঠে। চারদিকে শুধু খরগোশ আর খরগোশ। বর্তমানে ওকুনোশিমা দ্বীপে হাজারো খরগোশ রয়েছে। এসব খরগোশ বেশ বন্ধুবৎসল। মানুষ দেখলেই ছুটে আসে। খরগোশের এই দ্বীপ এখন হয়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকরা এখানে শুধুই খরগোশ দেখতে আসে।