বছর শেষ হতে এখনও আরও এক মাস বাকি। এরই মধ্যে চলতি বছরকে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি দুবাইয়ে শুরু হয়েছে জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৮। তার আগেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা চলতি বছরকে রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণতম বছর বলে ঘোষণা করেছে।
ডব্লিউএমও-এর গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট ২০২৩ অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ছিল গড়ে প্রায় ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। রেকর্ডটি একমাস বাকি থাকা সত্ত্বেও বছরটিকে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে ঘোষণা করার যথেষ্ট নিশ্চিয়তা প্রদান করেছে। এমনকি বিষয়টি কপ-২৮ সম্মেলনের আলোচকদের জন্যেও কঠোর সতর্কতা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে কপ-২৮ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে বলেছেন, ‘গ্লোবাল হিটিং রেকর্ড বিশ্ব নেতাদের শিরদাঁড়ায় নাড়া দেবে ও তাদের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। আমরা বাস্তব সময়ে জলবায়ু পতনের মধ্য দিয়ে বসবাস করছি যার প্রভাব ধ্বংসাত্মক।’
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন গত বছরের চরম উচ্চতায় পৌঁছানোর পর ২০২৩ সালে তা বাড়তে থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভূমিতে এবং এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমুদ্রে রেকর্ড পরিমাণে মাসিক উচ্চ তাপমাত্রা প্রবাহিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপ আবহাওয়াকে আরও খারাপ করছে যার ফলে মৃত্যু ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
পৃথিবীর স্থলভাগের প্রায় ৭০ ভাগ জায়গা দখল করে থাকা মহাসাগরগুলো ১৯৭১ সাল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে আটকে থাকা প্রায় ৯০ শতাংশ তাপ শোষণ করেছে৷ এটি বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার হারকে কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এর ফলে সমুদ্রের উচ্চ তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অম্লকরণ, স্থল ও সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ার মতো নেতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে ২০২৩ সালে সমুদ্রের তাপের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
অ্যান্টার্কটিকার বরফে আচ্ছাদিত সমুদ্রের এলাকা ২০২৩ সালে রেকর্ডের মাত্রায় কমেছে। কমেছে আর্কটিক সাগরের বরফও।
পরিসংখ্যান অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক প্রভাবের কারণে চলতি বছর গ্রিস, বুলগেরিয়া ও তুরস্কে চরম বন্যা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব লিবিয়ায় ভূমিধসে ৪ হাজার ৩৪৫ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ সাড়ে ৮ হাজার ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৪৩ হাজার।
হর্ন অব আফ্রিকাতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বন্যায় প্রায় ১৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গুতেরেস বলেন, ‘এই বছর বিশ্বজুড়ে মানুষকে আগুন, বন্যা ও ভয়াবহ তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত হতে দেখেছি। আজকের রিপোর্ট দেখে আমরা যে গভীর সমস্যায় আছি তা বুঝতে পেরেছি।’
সূত্র: ব্লুমবার্গ