গত হয়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার। শতবর্ষী এই কূটনীতিক পুরো জীবন ব্যয় করেছেন মার্কিন কূটনীতিতে। বাংলাদেশকে নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও পাকিস্তানের পক্ষে তার প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল বলে মনে করা হয়।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে দক্ষিণ এশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে হওয়া এক বৈঠকে বাংলাদেশে খাদ্য সহায়তার কথা উঠলে কিসিঞ্জার ‘বাস্কেট কেস’ প্রসঙ্গ তোলেন। এরপর থেকে বাস্কেট কেস বা তলাবিহীন ঝুড়ি কথাটা বাংলাদেশের হয়ে যায়।
বৈঠকে আলোচনা হচ্ছিল মূলত পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে। বিশেষ করে মার্চে যে বাংলাদেশে বড় ধরনের খাদ্যসংকট হবে, দুর্ভিক্ষও হবে—এ বিষয়গুলো নিয়ে। একপর্যায়ে বৈঠকের কথোপকথনে ‘বাস্কেট কেস’ প্রসঙ্গ আসে। অর্থাৎ, দেশটিতে যে সাহায্য দেওয়া হোক, তা ঝুড়ির ফুটো দিয়ে পড়ে যাবে। এরপর থেকে দীর্ঘ বছর পর্যন্ত প্রসঙ্গ এলেই বাংলাদেশকে বলা হতো বাস্কেট কেস।
সেই বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় মার্কিন সেনাপ্রধান চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল উইলিয়াম ওয়েস্টমোরল্যান্ড বলেন, ১৯৭২ সালের মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে আরও অনেক ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। তার জবাবে জাপানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউ এলেক্সিস জনসন বলেন, সেটা (বাংলাদেশ) হবে একটা ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস। যেখানে বৈদেশিক সহায়তার কোনো হিসাব-নিকাশ থাকবে না।
এলেক্সিস জনসনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ শুধু আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বাস্কেট কেস না। ওই সভায় উপস্থিত সবার চেয়ে পদাধিকার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন কিসিঞ্জার। সেই কারণেই হয়তো তার সভাপতিত্বে হওয়া বৈঠকে সব আলোচনায় দায়ভার এড়াতে পারেননি কিসিঞ্জার। সেই থেকে চালু হয়ে যায়, কিসিঞ্জারই প্রথম তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছেন।
১৯৭১ সালের সেই বৈঠকের পর প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এলেই ‘বাস্কেট কেস’ বলে উল্লেখ করতে শুরু করে। ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশের খাদ্যসংকট ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘বাস্কেট’। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদকীয়ের শিরোনাম ছিল, ‘ওয়ান ম্যান’স বাস্কেট কেস’।