রাজধানীর মহাখালীতে পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, একটি কক্ষে পরীক্ষা চলছে। পাচকের (শেফ) পোশাক পরা একদল শিক্ষার্থী। নানা পদের খাবার বানিয়ে অতিথিদের সামনে পরিবেশন করছেন তাঁরা। এটাই ব্যবহারিক পরীক্ষার ধরন। গৃহিণী, চিকিৎসক, উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, ট্রান্সজেন্ডার—কে নেই এই শিক্ষার্থীর দলে। প্রশিক্ষক একজন নারী, জাহিদা বেগম। শেফদের পরনের পোশাক থেকে শুরু করে রান্নার কৌশল, পরিচ্ছন্নতা—সবই কড়া চোখে যাচাই করছেন তিনি।
জাহিদা বেগম রন্ধনশিল্পের একজন বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষক ও পরামর্শক। ২৩ বছর ধরে তিনি নিরাপদ খাবার, হাইজিন (খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন প্রক্রিয়া এবং কর্মীদের স্বাস্থ্যসম্মত নীতির চর্চা), পুষ্টি, পর্যটন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কিচেন সেট–আপ বিষয়ে কাজ করছেন।
২০০০ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন জাহিদা। ২০০৩ সাল থেকে তিনি করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশনের (রন্ধনশিল্পবিষয়ক প্রশিক্ষণ) বিভাগীয় প্রধান এবং পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকার শেরাটন হোটেলে (বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কাজ করেছেন লিমো ইলেকট্রনিকসে, বিপণন নির্বাহী হিসেবে।
জাহিদার হাত ধরে গত ২০ বছরে প্রায় ২০ হাজার শেফ তৈরি হয়েছে। দেশ–বিদেশে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন তাঁরা। এ বিষয়ে জাহিদা বলেন, ‘আমার হাত ধরে প্রায় ২০ হাজার শেফ এই ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়েছেন। যাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশ, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে ভালো কাজ করছেন। এটা শুনে খুব গর্ব হয়।’
কয়েক দিন থেকে এক বছর—বিভিন্ন মেয়াদে কোর্স পরিচালিত হচ্ছে এ ইনস্টিটিউটে। এসব কোর্সে দেশীয় খাবারের পাশাপাশি ইউরোপীয়, চীনা, জাপানিসহ অন্যান্য খাবার তৈরি করা, পরিবেশন, বেকিং, খাবার ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা, হাইজিন, খাবার সংরক্ষণ পদ্ধতি, খাবার সংগ্রহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাবারের মূল্য নির্ধারণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, রন্ধনপ্রণালি ও তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনা, জনপ্রতি খাবারের পরিমাপ ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে।
জাহিদা বেগম বলেন, ‘২০ বছর ধরে শেফ বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বর্তমানে খাবার নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। রান্না করলাম, খেলাম—এখন আর বিষয়টি এতে আটকে নেই। খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এসব কিছু মাথায় রেখেই বেশির ভাগ মানুষ খাবার খাচ্ছেন। ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স শেষ করা ছেলেমেয়েরা এখন দেশে–বিদেশে বড় বড় পদে কাজ করছেন।’
জাহিদা বলেন, এখন আর হোটেলে নারীদের কাজ করতে দেখলেও কেউ অন্যভাবে তাকায় না। তাই এসব কাজে নারীরা যুক্ত হচ্ছেন।