Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকএক দফা আন্দোলনের ঢেউ পাকিস্তানে, উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

এক দফা আন্দোলনের ঢেউ পাকিস্তানে, উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

জয় বাংলাদেশ : বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনে পতন হয়েছে টানা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতা আকঁড়ে ধরে থাকা দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ সরকারের। বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা।

মুলত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ছাত্রদের এ আন্দোলন পরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি কোনায়। বছরের পর বছর বাংলাদেশে চলতে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক দূর্নীতি , বৈষম্য, লুটপাটের বিরুদ্ধে একট্টা হয়ে মাঠে নামে আপামর জনতা। সরকার গুলি চালিয়ে হত্যা করে জনতার রোষ ছত্রভঙ্গ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে আন্দোলন পরিণত হয় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। প্রায় এক হাজার মানুষকে হত্যা করে শেষমেষ বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার কাছে পরাস্ত হয়ে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই সাধারণ ছাত্রজনতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এই দৃষ্টান্ত গোটো পৃথিবীতে এক অনন্য নজির। দীর্ঘদিনের অন্যায়, অবিচার ও দুঃশাসন প্রতিরোধে এমন বিপ্লব, বিদ্রোহ বা মুক্তির সংগ্রাম অনেকের জন্যই এক অপরিহার্য শিক্ষা।

বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের ঘটনা অনুপ্রাণিত করছে পাকিস্তানের ছাত্রজনতাকে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের। এখন তারাও ছাত্রদের হাত ধরে বিপ্লবের পথে অগ্রসর হয়েছে।

বাংলাদেশের পর কি তাহলে পাকিস্তান?

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তাসহ বহু বিষয় নিয়ে উদ্ভূত সংকটের পটভূমিতে পাকিস্তানে ‘বর্ষাবিপ্লব’ কি চলে এসেছে ? বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের কারণে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

যার মূল কারন হলো ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পাকিস্তানে রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সমাজব্যবস্থার ব্যবধান উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। কারণ, এখানে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং আইনের শাসন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখানকার জনসাধারণ ক্ষুব্ধ। কারণ, তাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। কেবল তাই নয় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ পাকিস্তানে বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতির হার, তা এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ। সেখানে সোয়া কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং আরও ৯ কোটি ৫০ লাখ লোক দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে। পাকিস্তান ইকোনমিক সার্ভে নামের একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা অনুসারে, সেখানে ৪৫ লাখ যুবক এ মুহূর্তে বেকার। দেশটিতে বেকারত্বের হার ১১ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি। একটু বেশি আয় করা ও একটু ভালোভাবে জীবনযাপনের আশায় গত দুই বছরে ১৬ লাখ পাকিস্তানি নাগরিক মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এর বাইরে অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্যোগ হিসেবে আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কারণে অনানুষ্ঠানিক খাতে অনেক তরুণ বেকার হবেন। এ ছাড়া ইন্টারনেটে বিঘ্ন ঘটানোর ফলে ফ্রিল্যান্স সেক্টরেও বহু তরুণ বেকার হবেন।

অশান্ত খাইবার পাখতুনখাওয়ার পশতুন তাহাফুজ মুভমেন্টের নেতা মনজুর পশতিন এবং বেলুচিস্তানের বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটির মাহরং বালুচের মতো তরুণ নেতারা নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী বিক্ষুব্ধ তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ফলে অনেকটা বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে পাকিস্তান পরিস্থিতি কিছুটা সমান্তরাল অবস্থানে সেটি পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে ।

বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলনের ছাপ অনেকটাই স্পষ্ট পাকিস্তানের রাজপথে। নানা ধরনের বাংলা স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে দেশটির রাজপথ। রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা। পাকিস্তানি পতাকার পাশাপাশি সেগুলো হাতে নিয়ে মিছিল করছে দেশটির ছাত্র জনতা।

আগস্টের শুরু থেকে দফায় দফায় দেশের সংবিধান পুনরুদ্ধার ও ছাত্র সংঘগুলোকে উজ্জীবিত করতে আন্দোলনের ডাক দেয় পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিটিআই’র ছাত্র শাখা আইএসএফ। ৩০ আগস্টের মধ্যে ইমরান খানকে মুক্তির আল্টিমেটামও দিয়েছে পাকিস্তানের স্টুডেন্ট ফেডারেশন।

দেশটির গণমাধ্যমের দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনেকটাই প্রভাবিত পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ থেকে যুগিয়েছেন বিক্ষোভের অনুপ্রেরণা। এর ফলে বাংলাদশের পর এবার হয়তো দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থারও।

এদিকে বাংলাদেশের দেখানো পথ ধরে , পাকিস্তানে যখন সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে বিক্ষোভ, তখন আর জি কর মেডিকেল কলেজের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নবান্ন অভিযান’ বা সচিবালয় ঘেরাওয়ের ডাক দেয় ছাত্র-জনতা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামাল দিতে পুলিশকে ব্যবহার করতে হয়েছে জলকামান, টিয়ার গ্যাস। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে অংশ নিচ্ছে বহু শিক্ষার্থী ও জনতা।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড ও লাঠি ছুড়ে মারছে। ব্যারিকেড ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টায় অন্যদিকে পুলিশ প্রথমে জলকামান, পরে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে যেন গত জুলাইয়ে বিশ্বের চোখে দেখা এ আরেক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

রাগে ফুসঁতে থাকা নাগরিকদের দমিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার সচিবালয় ‘নবান্ন’ সংলগ্ন এলাকায় ৩৬৩ ধারা জারি করেছে। অর্থাৎ একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি মানুষ জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে।

দ্রুতই এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পশ্চিমবঙ্গে। শুধু তাই নয়, সেখান থেকে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ‘দফা এক, দাবি এক, হাসিনার পদত্যাগ’ এর আদলে ‘দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ’ দাবি তোলা হচ্ছে।

শুরুতে নারী নিরাপত্তা ও বিচারের দাবিতে রাস্তা দখলের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রতীকী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এটি সীমিত ছিল কলকাতার তিনটি জায়গায়। কিন্তু অল্প সময়ে তা দ্রুত পুরো পশ্চিমবঙ্গে বিস্তৃত হতে শুরু করেছে। দলহীন ও পতাকাহীন এ আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন অনেক তৃণমূল নেতার পরিবারের নারী, আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনেরাও। যা নিয়ে চিন্তিত শাসকদল তৃণমূল।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments