ক্রিপ্টোকারেন্সি স্ক্যাম বা জালিয়াতি নিয়ে সম্প্রতি এক অনুসন্ধান করেছে সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান সফোস। এতে দেখা যায় কীভাবে ডার্ক ওয়েবে বিশেষ কিছু কিটস বা টুলস বিক্রি করে সাইবার অপরাধীরা পিগ বুচারিং স্ক্যাম ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি চালাচ্ছে। এতে আরো দেখা যায়, এই সাইবার অপরাধগুলো ব্যবসায়িক মডেলের আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
সফোসের ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি স্ক্যামস মেটাস্ট্যাসাইজ ইনটু নিউ ফর্মস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পিগ বুচারিং (যা শা ঝু প্যান নামেও পরিচিত) স্ক্যাম বা অপরাধের নতুন পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত উঠে আসে। মূলত চীনের একটি অপরাধচক্র ডার্ক ওয়েবে আসা এই নতুন কিটগুলো তৈরি করেছে। ‘ডিইএফআই সেভিংস’ নামে বিশেষ একটি পিগ বুচারিং স্ক্যাম সংঘটিত করার জন্য নতুন এই কিটগুলো কিছু টেকনিক্যাল কম্পোনেন্ট সরবরাহ করে।
এই ‘ডিইএফআই সেভিংস’ স্ক্যামে তৈরি করা হয় বিনিয়োগের সুযোগের ফাঁদ। যাদের ক্রিপ্টো সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তারাই বেশি এই জালিয়াতির শিকার হয়।
বিনিয়োগ থেকে ভালো পরিমাণের সুদ পাওয়ার আশায় ক্রিপ্টো ওয়ালেটকে একটি ‘ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্ট’-এর সাথে সংযুক্ত করে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বাস্তবে তাদের ক্রিপ্টো ওয়ালেটগুলো একটি জাল ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং পুলের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। আর তখনই প্রতারকরা সেই ক্রিপ্টো ওয়ালেটের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
বিগত দুই বছর ধরে পিগ বুচারিং স্ক্যামিংয়ের ওপর সফোস এক্স-অপস অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। এর সম্প্রতি এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্রিপ্টো জালিয়াতিরা তাদের পূর্বের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা দূর করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে চুরি করার জন্য তাদের কৌশল ব্যবহারের হারও কমে গিয়েছে। অন্যদিকে, স্ক্যামাররা এখন বৈধ আর পরিচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে ভুয়া ক্রিপ্টো ট্রেডিং করতে পারছে। এমনকি, স্ক্যামাররা ওয়ালেট নেটওয়ার্কটি বা চুরি করা অর্থ লুকিয়ে রাখতে এখন সক্ষম। সব মিলিয়ে এই সাইবার অপরাধগুলো ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে উঠছে।
পিগ বুচারিং স্ক্যাম থেকে রক্ষা পেতে সফোসের কিছু পরামর্শ:
ফেসবুক বা অন্য কোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অপরিচিতদের কাছ থেকে পাওয়া কোনো মেসেজ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে যদি তারা দ্রুত হোয়াটসঅ্যাপের মতো আপনার ব্যক্তিগত অ্যাপগুলোতে যুক্ত হতে চায়। এছাড়া, কোনো ডেটিং অ্যাপে নতুন কোনো ম্যাচ বা পরিচয়ের ক্ষেত্রেও সাবধান থাকুন। বিশেষ করে যদি কোনো অপরিচিত ব্যক্তি ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করা সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করে তাহলে আরো সতর্ক থাকুন।
‘দ্রুত ধনী হওয়া’-এর মতো স্কিম বা অল্প সময়ের মধ্যে বড় রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেয় এমন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ সম্পর্কে সবসময় সাবধান থাকুন।
রোম্যান্স-স্ক্যাম এবং বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট-স্ক্যাম-এর কৌশলগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
যদি মনে হয় যে আপনি পিগ বুচারিং স্ক্যামের শিকার হয়েছেন, তাহলে সাথে সাথেই ক্রিপ্টো ওয়ালেটে থাকা অর্থ উত্তোলন করে ফেলুন এবং আইনের সাহায্য নিন।