জয় বাংলাদেশ: রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় প্রায় ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর আজকের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। দাবি না মানলে রোববার থেকে গণঅনশনের কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনের সংগঠক আব্দুর রহমান আজকের মতো আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে তারা সায়েন্সল্যাব মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং এর প্রভাবে রাজধানীতে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
সংগঠক আব্দুর রহমান বলেন, শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা এতদিন টেবিল আলোচনা, রাজপথে অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছি। রোববার থেকে কিছু শিক্ষার্থী গণঅনশনে যেতে চাইছে। তবে এ কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত নয়। রোববার পর্যন্ত অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তিনি আরও বলেন, সাত কলেজের দীর্ঘদিনের শোষণের অবসান প্রয়োজন। কোনো আমলাতান্ত্রিক কমিটি দিয়ে সাত কলেজের সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা বলছি না আজই সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করুন। বরং আপনারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমম্বয়ে একটি রূপান্তর কমিটি গঠন করুন। তারা কয়েকটি মডেল প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভালো মডেলটি নির্বাচন করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কোনো দাবি করলেই তা বাস্তবায়ন হয়ে যায়। সাত কলেজকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আমাদের দাবি মেনে নিন। নইলে আমাদের মেরে ফেলুন। তাহলে আর কেউ আন্দোলনে আসবে না।
এদিকে রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অন্যান্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আন্দোলন প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বুধবার (৩০ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয়পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন। এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে।
দেশের সমস্যাসঙ্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসেবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আমার সকল সহানুভূতি আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেবার কোনো নজির কোথাও নেই। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান উপদেষ্টা।