জয় বাংলাদেশ:
মার্কিন ভোটাররা বাছাই করবেন তাদের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু, সেই প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। তাই, মারিজুয়ানার ব্যবহার থেকে শুরু করে অভিবাসী কিংবা পররাষ্ট্র ইস্যুতে প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই বাইরের পৃথিবীরও চোখ থাকে। বিভিন্ন ইস্যুতে কমালা ও ডোনাল্ডের অবস্থান এবং সেসব বিষয়ে তাদের নীতি কী, তা তুলে ধরা হয়েছে এ লেখায়।
মূল্যস্ফীতি
কমালা হ্যারিস বলেছেন, প্রথম দিন থেকেই তার অগ্রাধিকার হবে শ্রমজীবী পরিবারের জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের খরচ কমানো। নিত্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম নির্ধারণের প্রবণতা বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। প্রথমবার বাড়ি কেনায় সহায়তা এবং আবাসন খাতে প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
বাইডেনের শাসনামলে মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী হয়েছে। অবশ্য কোভিড পরবর্তী সময়ে সরবরাহ সংকট এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলোকেও ভূগতে হয়েছে। তবে, সেসব দেশে পরবর্তীতে মূল্যস্ফীতি কমেছে।
ট্রাম্পের অঙ্গীকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সবকিছু মানুষের ক্রয় সামর্থ্যের মধ্যে আনবেন। তার ভাষায়, মেইক আমেরিকা অ্যাফোর্ডেবল অ্যাগেইন। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তেলের জন্য খনন বাড়ালে জ্বালানির মূল্য কমে আসবে।
তিনি সুদহার কমানোর অঙ্গীকারও করেছেন। যদিও সুদহার নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির নেই। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠালে আবাসনের ওপর চাপ কমবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প।
এছাড়া, তিনি আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপের আভাস দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
কর
বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বছরে চার লাখ ডলারের বেশি আয় করা আমেরিকানদের ওপর কর বাড়াতে চান কমালা হ্যারিস। অবশ্য, কোনো পরিবারের করের বোঝা লাঘব করতে, সন্তানের বিপরীতে কর ছাড়ের ব্যবস্থা রাখার কথাও বলেছেন তিনি।
সম্পদ আহরণের ওপর বাইডেনের আরোপিত করের সঙ্গেও হ্যারিসের দ্বিমত রয়েছে। ট্রাম্পও বিপুল পরিমাণ করছাড় দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন। একে তার ২০১৭ সালের করহ্রাসের নীতিরই বর্ধিত রূপ বলা চলে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধনীদেরই সহায়তা করেছে।
তিনি বলেছেন, কর কমালে আয় যতটুকু কমবে তা তিনি উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি শুল্ক দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবেন।
বিশ্লেষকরা দু’জনের পরিকল্পনায়ই অর্থনৈতিক ঘাটতি বাড়াবে। তবে, ট্রাম্পের বেলায় সেটা বেশি করে বাড়বে।
গর্ভপাত
গর্ভপাতের অধিকারকে তার প্রচারণার কেন্দ্রে রেখেছেন কমালা হ্যারিস। তিনি সারাদেশের জন্য অভিন্ন প্রজনন অধিকার সুরক্ষা আইনের পক্ষে কথা বলছেন। গর্ভপাতের ইস্যুতে নিজের বক্তব্যে স্থির থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। সুপ্রিম কোর্টে তার সময়ে নিয়োগ দেওয়া তিন বিচারকের হাতেই গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়।
অভিবাসন
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তের সংকট সামাল দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমালা হ্যারিসকে। তিনি কোটি কোটি ডলার অনুদান সংগ্রহে ভূমিকা রাখেন, যার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ করে উত্তর অংশ অভিমুখে স্রোত ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০২৩ এর শেষ নাগাদ মেক্সিকো থেকে রেকর্ড সংখ্যক লোক প্রবেশ করেছে বটে কিন্তু পরবর্তীতে সংখ্যাটা কমে আসতে থাকে। হ্যারিস তার প্রচারণায় নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা যেমন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় আইনজীবী হিসেবে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের কথাও মনে করিয়ে দিয়ে থাকেন।
ট্রাম্প এ দফায় সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে চান। সেই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে আরো বেশি করে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েনের অঙ্গীকার করছেন তিনি।
কিন্তু, হ্যারিসের উদ্যোগে কঠোর অভিবাসন নীতি সম্বলিত কোনো ক্রস পার্টি আইন (সর্বদলীয়) প্রণয়নের অংশ না হতে রিপাবলিকানদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হ্যারিস বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি এ বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী প্রত্যর্পণ ঘটানোর অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। গণহারে অবৈধ অধিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে বলেছেন, এই উদ্যোগ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
পররাষ্ট্র নীতি
ইউক্রেনকে যতদিন প্রয়োজন ততদিন সমর্থন দিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন কমালা হ্যারিস। তিনি নির্বাচিত হলে, চীন নয়, ২১ শতকের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রই জিতবে, দিচ্ছেন এমন প্রতিশ্রুতিও।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সোচ্চার। গাজা যুদ্ধ বন্ধে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান একলা চলো অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতার পক্ষে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে রাখতে চান তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানবেন। ডেমোক্র্যাটদের দাবি এই পদক্ষেপ ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও শক্তিশালী করবে।
ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন কীভাবে, এ নিয়ে তাকে বিশেষ কিছু বলতে শোনা যায় না।
বাণিজ্য
ট্রাম্পের আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনার সমালোচনা করছেন কমালা হ্যারিস। তার মতে, এতে প্রকারান্তরে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নতুন করে কর আরোপ করা হবে, যার ফলে একটি পরিবারকে বছরে প্রায় চার হাজার ডলার বেশি খরচ করতে হবে।
আমদানির ওপর কর আরোপের ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চান কমালা। ইতোমধ্যেই বাইডেন প্রশাসন চীন থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ির মত কিছু পণ্য আনার ক্ষেত্রে যে শুল্ক চালু করেছে, সেটিই অনুসরণ করবেন কমালা হ্যারিসও।
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের অঙ্গীকারের কেন্দ্রে রয়েছে শুল্ক ব্যবস্থা। বেশিরভাগ বৈদেশিক পণ্যের ওপর নতুন করে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের অভিপ্রায় তার। আর চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে সেই হার হবে আরো বেশি।
কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদনের জন্য উৎসাহিত করতে কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প।
জলবায়ু
জো বাইডেনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে মূলস্ফীতি কমানোর আইন পাশে ভূমিকা রেখেছিলেন মিজ হ্যারিস। এই আইন পাশের ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন খাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক প্রণোদনা মিলবে।
কিন্তু, ‘ফ্র্যাকিং’ পদ্ধতিতে খননের মাধ্যমে তেল-গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্রে বিরোধিতা থেকে সরে এসেছেন কমালা। পরিবেশবাদীরা এই পদ্ধতির বিপক্ষে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে থাকাকালীন পরিবেশ সুরক্ষার বহু উদ্যোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রত্যাহার করে নেয়া তেমন উদ্যোগেরই একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ সীমিত রাখা।
এবারের প্রচারণায়, নির্বাচিত হলে তিনি জ্বালানির জন্য উত্তর মেরুতে খনন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে কথা বলছেন।
গাঁজা
বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে মারিজুয়ানা বা গাঁজার ব্যবহারকে বৈধতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমালা হ্যারিস। তার মতে, বহু মানুষকে শুধু সঙ্গে গাঁজা রাখার কারণে কারাগারে যেতে হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিন নাগরিকদের গ্রেফতারে ক্ষেত্রে সংখ্যাগত অসামঞ্জস্যের দিকেও ইঙ্গিত করেন তিনি।
ট্রাম্প তার দৃষ্টিভঙ্গি নমনীয় করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে অল্প পরিমাণ মারিজুয়ানা বহনের জন্য “অপ্রয়োজনে গ্রেফতার এবং কারাগারে পাঠানো বন্ধ করার” এখনই সময়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি