জয় বাংলাদেশ: মার্কিনীদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে নিবার্চন । নভেম্বরের নিবার্চনে কোন দলের পদ প্রার্থীরা এগিয়ে তা জানতে প্রতিনিয়ত চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। তাতে দেখা গেলাে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জনপ্রিয়তায় অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসোসের করা জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা যেখানে ৪১ শতাংশ, সেখানে কমলার জনপ্রিয়তা ৪৫ শতাংশ। তবে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে কমলার চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে জরিপ করেছে রয়টার্স। এর আগে গত জুলাই মাসের শেষে করা রয়টার্স/ইপসোস জরিপেও কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তবে তখন তাদের মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩ পয়েন্টের। অর্থাৎ কমলা গত এক মাসে ব্যবধান আরও ১ পয়েন্ট বাড়িয়েছেন। নতুন জরিপ আট দিন ধরে চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, নারী ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে কমলার প্রতি সমর্থন বেড়েছে।
নতুন জরিপে দেখা গেছে, নারী ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা ৪৯ শতাংশ, যেখানে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ ট্রাম্পের সঙ্গে কমলার ব্যবধান ১৩ শতাংশ। এর আগে গত জুলাইয়ে রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে নারী ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে কমলা ৯ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। গত এক মাসে তিনি ৪ শতাংশ ব্যবধান বাড়িয়েছেন।
তবে কমলার চেয়ে শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। গত জুলাই ও আগস্টের মধ্যে এ ব্যবধান খুব বেশি বাড়েনি। তবে কলেজ ডিগ্রিধারী ভোটারদের মধ্যে এ ব্যবধান ৭ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন কমলা।
ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের বাজে ফলের জেরে গত ২১ জুলাই সরে দাঁড়ান বাইডেন। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জরিপ ও গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর জরিপে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন কমলা।
রয়টার্স/ইপসোসসহ জাতীয় জরিপগুলো থেকে ভোটারদের মতামত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী নির্ধারণে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর আগে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল।
এই রাজ্যগুলো হলো উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও নেভাদা। নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে করা জরিপে এসব অঙ্গরাজ্যে কমলা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্প ২ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এসব অঙ্গরাজ্যে ৪৫ শতাংশ আর কমলার ৪৩ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার বলেছেন, কমলা হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর তারা নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন। এর আগের জরিপে বাইডেনকে ভোট দিতে উৎসাহের কথা বলেছিলেন মাত্র ৬১ শতাংশ ভোটার।
অবশ্য উৎসাহের দিক বিবেচনায় ট্রাম্পের ভোটাররাও পিছিয়ে নেই। ৬৪ শতাংশ ভোটার বলেছেন, হ্যারিসের বিরোধিতা করার চেয়ে ট্রাম্পকে সমর্থন করেই তারা বেশি অনুপ্রেরণা পান।
ভোটারদের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় কমলার চেয়ে ট্রাম্প অনেকটাই এগিয়ে। ৪৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, অর্থনীতি সামলাতে ট্রাম্প বেশি যোগ্য। কমলার ক্ষেত্রে এ সমর্থন মাত্র ৩৬ শতাংশ। তবে গর্ভপাত নীতিতে হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। ট্রাম্পের সমর্থন যেখানে ৩১ শতাংশ, সেখানে কমলার ৪৭ শতাংশ।
৪ হাজার ২৫৩ জনের মধ্যে রয়টার্স/ইপসোসের এ জরিপ চালানো হয়, যার মধ্যে নিবন্ধিত ভোটার ৩ হাজার ৫৬২ জন। এ জরিপ চালানোর সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী রবার্ট কেনেডি জুনিয়র প্রচার চালাচ্ছিলেন। তবে ২৩ আগস্ট তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। জরিপে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৬ শতাংশ ভোটার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার হিসাব-নিকাশও পাল্টে গেছে। বাইডেনের চেয়ে যেখানে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন, সেখানে কমলা এখন ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে ডেমোক্র্যাটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেন কমলা। এর পর থেকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জোরালো হয়েছে।