জয় বাংলাদেশ: শিগগিরই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র। ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এই আলোচনা হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সে লক্ষ্যেই এই আলোচনা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এটাই হবে প্রথম উচ্চপর্যায়ের আলোচনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এই আলোচনায় অংশ নেবেন।মার্কিন প্রতিনিধিদলে দেশটির অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে তারকা দেশ ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফেলে। জ্বালানিসহ আমদানি পণ্যের ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে দেশটি ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বারস্থ হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, রাজস্ব ও মুদ্রানীতি নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে আলোচনা হবে স্বাস্থ্য ও আর্থিক ব্যবস্থা নিয়েও। সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা ও ভবিষ্যতে অধিকতর সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী।
ব্রেন্ট নেইম্যান আরও বলেন, আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পৃক্ততা, যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দেবে। আর্থিক খাতের গভীর সংস্কার, দুর্নীতি হ্রাস ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চায়, তার প্রতিও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের আগে ও পরে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়, তার জেরে অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এই খাতের কর্তাব্যক্তিরা গত মাসে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা পোশাক তৈরির কিছু কাজ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন যেন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা না হয়, সে কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ড. ইউনূসও শ্রম সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত আরও ক্রয়াদেশ পেতে পারে বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে তাঁর বিরোধীরা উল্লসিত হলেও ভারত মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার হচ্ছে। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারতের একধরনের বিদ্বেষ তৈরি হচ্ছে। যদিও গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আছে—এমন ইঙ্গিত পুরোপুরি মিথ্যা।