জয় বাংলাদেশ:
গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির গাড়িবহরে হামলা এবং প্রাণহানীর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতা–কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তারা হায়েনার মতো লুকিয়ে আছে এবং যেকোনো সময় আক্রমণ করবে। সেই আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে।’
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান।
এ সময় ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে অর্জিত বিজয়ে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সবাই বলছি যে স্বাধীন হয়েছি। হয়তো হয়েছি। কিন্তু এখনো চতুর্দিকে নাগিনীরা ছড়াইছে নিঃশ্বাস। তাদের চক্রান্ত তারা বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে এবং আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। আজকে আমাদের সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য, যে ঐক্য নিয়ে আমরা ১৬ বছর লড়াই করেছি। সেই ঐক্যকে অটুট রাখা এবং কোনোমতেই তাদের চক্রান্তে পা না দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সামনের দিনগুলোতে পেছনে ফিরে না তাকাই। সামনের দিনগুলোতে আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে দেশের পক্ষে জনগণের পক্ষে এগিয়ে যাই।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটা আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। জনগণ মনে করে এই সরকার তাদের একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে এমন একটা জায়গায় আনবে, যেখানে সত্যিকার অর্থেই একটা অর্থবহ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
বিগত সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার ও নিখোঁজদেরও সন্ধান দাবি করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার এবং সরকারকে এটা করতে হবে।’
এর আগে বৃষ্টিস্নাত বিকেলে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মরণ সভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। গণতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে এই স্মরণসভা নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই অনুষ্ঠান একদিকে আমাদের ভারাক্রান্ত করে তোলে, অন্যদিকে আমাদের আনন্দিত করে। গণতন্ত্রের জন্য এ দেশের মানুষ সব সময় আত্মত্যাগ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। আমরা যখন স্বাধীন হয়েছি ১৯৭১ সালে, তখন আমরা ধরেই নিয়েছিলাম সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ পাবো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সেদিন যারা গণতন্ত্রের প্রধান দাবিদার ছিলেন, স্বাধীনতার দাবিদার ছিলেন, তাদের হাতেই, আওয়ামী লীগের হাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়। তারা ১৯৭৫ সালে এক দলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ভুললে চলবে না। এ কথা বারবার আমাদের মনে করতে হবে এই দলটি আবার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। বারবার ছাত্র-জনতার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামকে দমন করার জন্য অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতন গুম খুনের আশ্রয় নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বিগত জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং তারও আগে এদেশের মানুষ লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে ত্যাগ স্বীকার করেছে।’
দলের নেতা–কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা শত প্রলোভনে, উসকানিতেও শান্ত থেকেছেন এবং দেশকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে সংযুক্ত থেকেছেন।’