জয় বাংলাদেশ: সবার জন্য স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’র সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে ড. ইউনূস গত মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের পর তার প্রথম ভাষণে এ আহ্বান জানান।
বাংলায় দেওয়া ভাষণে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা দেখিয়েছে যে, ভেদাভেদ ও মর্যাদা নির্বিশেষে মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখা শুধু আকাঙ্ক্ষিত থাকতে পারে না। ‘এটা সবার প্রাপ্য।’
তিনি বলেন, ‘তাই আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত ও গভীর করার আহ্বান জানাব, যাতে আমরা একটি ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারি।’
ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এমন কিছু জায়গা তৈরি করা উচিত, যাতে কর্মসংস্থান, স্থানীয় আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ বা জীবিকার জন্য রূপান্তরমূলক প্রয়োগ বা সমাধান আনতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন যেখানে বৈশ্বিক ব্যবসা ও জ্ঞানীরা মানুষের চাহিদার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের এই অধিবেশনে বাংলাদেশ আশ্বস্ত করবে যে, আমরা আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ভূমিকা রাখব এবং তা অব্যাহত থাকবে।’
শান্তি, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি এবং সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের জন্য এই মহান হলটি যখন কান্নাকাটির আহ্বানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, তখন তিনি বলেন, তারা আজ পুরুষ ও নারীদের কীভাবে সাহসী করে তুলেছেন, আগামী দিনের উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের বিকাশের জন্য জায়গা তৈরি করেছেন তা তাদের প্রতিফলিত করা দরকার।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের সক্ষমতা, সম্পদ এবং সমাধান যথেষ্টের চেয়ে বেশি রয়েছে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, আসুন আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যে অঙ্গীকার করেছি তা পূরণ করি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন আমরা সকল প্রকার অসাম্য ও বৈষম্যের অবসান ঘটাই, বিশেষ করে আমাদের অর্থনৈতিক পারস্পরিক সম্পর্কে, সামাজিক ব্যবসার প্রস্তাবকে এগিয়ে নিতে।’
অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যের শুরুতে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবিচল অঙ্গীকারের জন্য মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘোষণাপত্র এজেন্ডা ২০৩০ এর বাইরে পথ নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষত ভবিষ্যতের শীর্ষ সম্মেলন আহ্বানে তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি।’
বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এই সম্মেলনের ফলাফল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা ও পুনর্বিবেচনার সহযোগিতা বাস্তবায়নে পথনির্দেশক কাঠামো হিসেবে কাজ করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশ যে যুগান্তকারী পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে, তার জন্য আমি জাতির এই সংসদে দাঁড়িয়ে আছি। ‘সাধারণ জনগণের ক্ষমতা, বিশেষ করে আমাদের তরুণদের ক্ষমতা’ আমাদের জাতিকে আমাদের অনেক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানোর একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।’
ছাত্র ও যুবকদের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বৈষম্যের অবসান ঘটানো।
ধীরে ধীরে এই আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত বিশ্ব দেখেছে রাস্তায় এবং অনলাইনে কীভাবে স্বৈরাচার, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে জনগণ।’
তিনি বলেন, জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ তাদের ব্যতিক্রমী সংকল্প ও সামর্থ্য দিয়ে স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কাছ থেকে স্বাধীনতা এনেছে।
তিনি বলেন, ‘সেই সম্মিলিত সংকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে সংজ্ঞায়িত করা উচিত এবং আমাদের জাতিকে জাতিগোষ্ঠীতে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত।’
এটি প্রকৃতপক্ষে এমন একটি আন্দোলন ছিল যা প্রাথমিকভাবে রাজনীতি ও উন্নয়নে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চিত লোকদের একত্রিত করেছিল।
“কে ‘সমৃদ্ধি’ ভাগ করে নিতে বলেছিল, অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে বলেছিল। জনগণ একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিল, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে তাতে আমরা অভিভূত।
ইউনূস বলেন, ‘এমনকি বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। অল্পবয়সী মেয়েরা অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সোচ্চার ছিল। , স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা জীবন দিয়েছে।’
শত শত মানুষ চিরতরে চোখ হারিয়েছেন। মায়েরা, দিনমজুর এবং শহরের অসংখ্য মানুষ তাদের ‘সন্তানদের’ সমর্থনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ঘাম, বৃষ্টি ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তারা বছরের পর বছর ধরে জনগণের যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যাবহারকারী মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের চক্রান্ত ও কূটকৌশলকে পরাজিত করেছে।
তিনি বলেন, গণআন্দোলনের ফলে আনুমানিক আট শতাধিক শহীদ স্বৈরাচারী সরকারের হাতে নিহত হয়েছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে উদারতাবাদ, বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতায় জনগণের গভীর বিশ্বাসের কারণে। কয়েক দশক পরে, আমাদের ‘জেনারেশন জেড’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণ যে মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, সেটিকে নতুন করে কল্পনা করতে বাধ্য করছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৫২ সালে আমাদের দেশ যেমনটা করেছিল।’
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্ব বাংলাদেশে যে ‘বর্ষা বিপ্লব’ প্রত্যক্ষ করেছে, তা বিভিন্ন সম্প্রদায় ও দেশের অনেককে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাদের তরুণ সমাজ ও জনগণ মিলে তাকে এবং কাউন্সিলে তার সহকর্মীদের ওপর একটি ক্ষয়িষ্ণু রাষ্ট্রযন্ত্র পুনর্গঠনের বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করেছে।
তিনি সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলেন, ‘আমরা যখন অফিসে গিয়েছি, চরম বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে আমরা দেখেছি যে কীভাবে একটি ‘কার্যকর গণতন্ত্র’ প্রহসনের পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। কীভাবে মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মমভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল। কীভাবে সরকাররিকোষাগারকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছিল। কীভাবে অভিজাতরা ব্যবসা দখল করেছিল। কীভাবে ‘নির্বাচিত কয়েকজন’ তাদের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত করেছিল এবং বাংলাদেশ থেকে সম্পদ সংগ্রহ ও পাচার করেছিল।’
সব মিলিয়ে প্রায় প্রতিটি স্তরে ন্যায়বিচার, নীতি ও নৈতিকতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলা এবং দেশকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘অতীতের ত্রুটিগুলো সংশোধন করার পাশাপাশি একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং গতিশীল অর্থনীতি এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা।’
তিনি বলেন, এই ব্যাপক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলই এখন স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত জানাতে পারছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের জন্য একটি প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে সরকারি পদ ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকলকে তাদের সিদ্ধান্ত ও কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করা।’
তিনি বলেন, মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, কোনো ভয় বা বাধা ছাড়াই একত্রিত হতে পারে, যাকে খুশি ভোট দিতে পারে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে সাইবার ডোমেইনসহ মৌলিক অধিকারগুলো প্রচার ও সুরক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘কৃষক বা শ্রমিকের সন্তান যাতে সমাজে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারে, সেজন্য আমরা বিশাল অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকে অগ্রাধিকার দিই।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য সব ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা।
অধ্যাপক ইউনূস আশ্বস্ত করেন যে, তার সরকার বাংলাদেশের সকল আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মেনে চলবে।
‘বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে বহুপাক্ষিকতাবাদের সক্রিয় প্রবক্তা হিসেবে থাকবে, যার কেন্দ্রে থাকবে জাতিসংঘ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মর্যাদা ও গৌরব এবং অভিন্ন স্বার্থ’ সমুন্নত রেখে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশ আগ্রহী।’
মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠিয়েছেন গণ আন্দোলনের সময় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করতে এবং টেকসই পথ সংশোধনের পরামর্শ দিতে।
সেই মিশন ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সরাসরি কাজ শুরু করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমি হাইকমিশনার ভলকার তুর্ককে গভীর সাধুবাদ জানাই।
দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সে যোগ দিয়েছে সরকার।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জাতীয় আইন প্রণয়নের কাজ চলছে, যাতে আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারি।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে গুমের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোর তদন্ত শুরু করেছে একটি তদন্ত কমিশন।
জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশে যেন সেই দুঃখজনক অতীতের পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কিছু খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
সেই লক্ষ্যে সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা খাত সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করে।
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম ও গণমাধ্যমসহ অন্যান্য খাতের সংস্কারের জন্য আরও কয়েকটি কমিশন গঠনের কাজ চলছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করছি, কোনো বিদেশি ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে না দিতে।’
সংস্কারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে কার্যকর রক্ষাকবচ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করাই কমিশনগুলোর লক্ষ্য।