Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeনিউইয়র্ক নিউজনিউইয়র্ক সিটি মেয়রকে বিপদে ফেলে দূরে সরলেন তারা !

নিউইয়র্ক সিটি মেয়রকে বিপদে ফেলে দূরে সরলেন তারা !

জয় বাংলাদেশ : ডেমোক্রেটিক রাজনীতিকে সক্রিয় এরিক আডামসের শুরুটা ছিলো নিউইয়র্ক সিটির পুলিশের ক্যাপ্টেন হিসাবে। ব্রুকলিন বরোবাসীর জন্য সবোর্চ্চ সেবার নিশ্চিত করার পর আকাশ সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু শেষমেষ এই সিটির নাগরিকদের ভালবাসা ধরে রনাখতে পারলেন না। মেয়র পদে মেয়াদ শেষ করার আগেই এরিক অ্যাডামসের জনপ্রিয়তায় ধস নামতে শুরু করেছে। অনকেটা একা হয়ে পড়ছেন তিনি। জনপ্রিয়তার সময় যারা এরিকের পাশে পাশে থেকেছেন আজ দূর্দিনে তাদের দেখা মিলছে না যেনর।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্তের মুখে থাকা নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস ৭ অক্টোবর সোমবার ঘোষণা করেছেন, তিনি তার ডেপুটি মেয়র ফর পাবলিক সেফটি ফিলিপ ব্যাংকসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এটি মেয়র অ্যাডামসের প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক পদত্যাগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর আগে একে একে পদত্যাগ করেন তার প্রশাসনের প্রায় এক ডজন শীর্ষ কর্মকর্তা। শুরু হয়েছে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াও। গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোহাম্মদ বাহিকে, যিনি আগের দিন সোমবার মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। মেয়র এবং তার প্রচারণার তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে অ্যাডামস তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখেও পড়েছেন। ইতিমধ্যে ডেমোক্র্যাট গভর্নর ক্যাথি হোকুলের পক্ষ থেকেও তাকে পদত্যাগের চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মেয়রের বিরদ্ধে চলা দীর্ঘদিন থেকে দুনীর্তির অভিযোগ এবং তদন্ত চলাকালে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বরাবর সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে ইনডাইট করা হলে তিনি ম্যানহ্যাটানের ফেডারেল কোর্টে হাজিরা দেন এবং বেরিয়ে এসে দাবি করে বলেন ‘আমি সম্পূর্ণ নিদোর্ষ। যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে এফবিআই তার সবই মিথ্যা বলে প্রমাণ করব আদালতে।’

এরিক অ্যাডামসকে ইনডাইট করার আগেই তার প্রশাসনের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুনীর্তির ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। ফলে তারা পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। এছাড়াও আরো কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না উঠলেও তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের সরিয়ে নেন সিটি প্রশাসন থেকে। অভিযুক্ত হয়ে বা না হয়ে যারা সম্প্রতি মেয়র অ্যাডামস প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেছেন তারা হলেন- পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ক্যাবান। তিনি পদত্যাগ করেন গত ১২ সেপ্টেম্বর। মাত্র এক বছরের মত এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অ্যাডামস প্রশাসনের বিল্ডিং কমিশনার এরিখ আলরিচের বিরুদ্ধে প্রথম দুনীর্তির অভিযোগ ওঠে ২০২২ সালে। তিনি ঐ বছর নভেম্বর মাসেই পদত্যাগ করেন। এর আগের পুলিশ কমিশনার কিচ্যান্ট সিওয়েল পদত্যাগ করেন গত বছর ২০২৩ সালে। তবে কোনো দুনীর্তির অভিযোগে নয়।

নিউইয়র্ক সিটির ল’ ডিপার্টমেন্টের প্রধান, করপোরেশন কাউন্সেল সিলভিয়া হিন্ডস র‌্যাডিক্স পদত্যাগ করেন এ বছর মে মাসে। ডিপার্টমেন্ট অব ফায়ারের কমিশনার লরা ক্যাভানাহ পদত্যাগ করেন এ বছর ১৩ জুলাই। তিনি জানান পরিবারের সাথে বেশি সময় অতিবাহিত করার লক্ষ্যে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

মেয়রের চিফ কাউন্সেল লিসা জোনবার্গ পদত্যাগ করেন ১৪ সেপ্টেম্বর। হেলথ কমিশনার অশ্বিন ভাসান পদত্যাগ করেন ২৩ সেপ্টেম্বর। স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাংকস দুই সপ্তাহ আগে ঘোষণা দেন তিনি পদত্যাগ করছেন। তা কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে। এ সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ উঠলে ঘোষণা দেন এ মাসের ১৫ তারিখ থেকেই তার পদত্যাগ কার্যকর হবে। সিটি হলের সিনিয়র অ্যাডভাইজার টিমোথি পিয়ারসন। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ছাড়াও অনেক দুনীর্তির অভিযোগ রয়েছে। তিনি পদত্যাগ করেন ৩০ সেপ্টেম্বর। তা কার্যকর হয়েছে শুক্রবার ৪ অক্টোবর থেকে। সবশেষে শুক্রবার ডেপুটি মেয়র শিনা রাইটসের পদত্যাগের খবর বের হলেও সিটি হল তা নিশ্চিত করেনি।

মেয়র এরিক এডামস কমিউনিটি ইমিগ্রান্ট ও মাইগ্রেন্ট বান্ধব মেয়র। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় পদত্যাগের দাবি উঠেছে। সর্বশেষ জরিপে তার পদত্যাগের পক্ষে প্রায় ৭০ শতাংশ বলে জানা গেছে। কিন্তু মেয়র অ্যাডামস বলছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। অতএব, পদত্যাগ করবেন না। এখন গভর্নর ক্যাথি হোকুলের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। তিনি বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

মেয়রের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক উইনি গ্রেকোও পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া সিটি হলের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেয়রের তুর্কি কমিউনিটির লিয়াজোঁ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সহকারী রানা আব্বাসোভাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
ফেডারেল তদন্তকারীরা তিনজনেরই ডিভাইস জব্দ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্তও চলছে। এতে অ্যাডামসের প্রশাসন বেশ চাপের মুখে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের একের পর এক পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।

এক সাক্ষাৎকারে মেয়র অ্যাডামস জানান, ব্যাংকস ৬ অক্টোবর রবিবার তাকে জানিয়েছেন যে তিনি ‘নতুন কিছু করতে চান’ এবং তিনি চাইছেন না যে তার পদত্যাগের কারণে শহরের কার্যক্রম ব্যাহত হোক।
অ্যাডামসের বিরুদ্ধে গত মাসে বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে অবৈধ অনুদান গ্রহণ এবং ঘুষ নেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। তবে এর জন্য তিনি দোষী নন বলে দাবি করেছেন।
ফিলিপ ব্যাংকসের পদত্যাগের আগে তার ভাই, শহরের শিক্ষা চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাংকস মেয়রের নির্দেশে নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগে পদত্যাগ করেন। আরেক ভাই টেরেন্স ব্যাংকসের বিরুদ্ধে একটি পরামর্শক সংস্থার মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে আলাদা তদন্ত চলছে।
মেয়র অ্যাডামস পদত্যাগের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে পুরো সত্য যখন প্রকাশিত হবে, নিউইয়র্কবাসী দেখবে যে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম।’
উইনি গ্রেকো প্রায় এক দশক ধরে অ্যাডামসের সঙ্গে চীনা-আমেরিকান কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কাজ করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অর্থ সংগ্রহ এবং প্রশাসনে তার অবস্থান ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর তাকে নিয়ে শহরের ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টিগেশন তদন্ত শুরু করেছে।
রানা আব্বাসোভা যিনি মেয়রের ক্যাম্পেইনের জন্য তুর্কি নাগরিকদের কাছ থেকে অবৈধ অনুদান সংগ্রহের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ, তিনি আগেই প্রশাসন থেকে ছুটিতে ছিলেন এবং তাকে এখন বরখাস্ত করা হয়েছে।
অ্যাডামসের আইনজীবী অ্যালেক্স স্পাইরো দাবি করেছেন, আব্বাসোভা প্রসিকিউটরদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন।

জানা গেছে, আব্বাসোভা বর্তমানে ম্যানহাটন ফেডারেল প্রসিকিউটরদের সাথে সহযোগিতা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তিনি এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন। আব্বাসোভা মেয়রের আন্তর্জাতিক বিষয়ক অফিসের প্রটোকল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, মেয়রের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক উইনি গ্রেকো ৭ অক্টোবর সোমবার পদত্যাগ করেছেন। এর আগেই গ্রেকোর বাড়িতে এফবিআই অভিযান চালিয়েছিল। পাশাপাশি মেয়রের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সদস্য মোহাম্মদ বাহিও পদত্যাগ করেছেন। তবে তাদের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments