বাসে কি হলো বোঝাই গেল না। বহু প্রয়োজনীয় ফোনটা গেলো। হতে পারে আপনার মানিব্যাগটাও গেলো। বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই দিক্বিদিক দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাতে আর লাভ নেই। ততক্ষণে আপনার মূল্যবান সম্পদ বেহাত। এমনি চারপাশে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
এসব অপরাধের দ্রুত সমাধান খুঁজতে গুরুগ্রান একটি টেক স্টার্টাপ সম্প্রতি নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এসটাকু টেকনোলজিস নামে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালেই কাজ শুরু করে। তখন কয়েকজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞও তারা নিয়োগ দেন। এবার তারা নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এসেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য তারা নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ত্রিনেত্রা বাংলায় বললে ত্রিনয়ন টু পয়েন্ট জিরো না মে একটি শক্তিশালী ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে তারা নাম দিয়েছে ক্রাইমজিপিটি। আর এভাবেই ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনে নতুন মাত্রা সংযোজনের সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে সবার জন্য। এসটাকুর কো-ফাউন্ডার এবং সিইও অতুল রাই জানান, ‘আমরা যখন বড় ডাটার কথা বলি তখন ইন্টারনেটে থাকা ইমেজ, ভিডিও নিয়েই আলোচনা করি। আমরা মূলত ভারতের অ্যানালগ ক্যামেরাকেও স্মার্ট করে তুলতে চাই।
কিভাবে শুরু হয় এই যাত্রা?
রাই নিজেও একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেছেন। পরবর্তীতে অনুরাগ সাইনি এবং পঙ্কজ শর্মার সঙ্গে মিলে তিনি একটি সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করেন। ভারতের পুলিশকে সহযোগীতার জন্য এমন মডেল তৈরির ভাবনা তার তৈরি হয়।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ত্রিনেতরা ১.০। এই প্লাটফর্ম ক্রিমিনাল রেকর্ড বিশেষত নথির ছবি ও অন্যান্য বিবরণকে ডিজিটালাইজ করার কাজ করে। এই প্রক্রিয়ার পরে তারা দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ শুরু করে। রাই জানান, পরবর্তী সংস্করণের মাধ্যমে আনস্ট্রাকচারড ডাটা বিশ্লেষণে আমরা জোর দেই।
রাইয়ের মতে, হাজারো নথিকে ডিজিটালাইজ করা সহজ কাজ নয়। কাজটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এখানেই ক্রাইম জিপিটির কামাল। তাদের ডেভেলপ করা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল উত্তর প্রদেশের অন্তত ৯ লাখ ডাটা বিশ্লেষণ করেছে। এগুলোকে রিট্রিভাল অগমেন্টেড জেনারেশন (র্যাগ) টেকনিকের মাধ্যমে নিখুঁত ও ফ্যাকচুয়্যাল তথ্য বের করা সম্ভব। রাই জানিয়েছেন, ক্রাইমজিপিটিকে নির্দিষ্ট আর্কিটেকচারাল মডেল দিয়ে অপরাধ বিশ্লেষণের জেনারেটিভ ক্ষমতা দেয়া যাবে।
ক্রাইম জিপিটি কাজ করে কিভাবে
রাই জানান, ক্রাইমজিপিটি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ কোয়ারিজের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য আনস্ট্রাকচারড ডাটা বের করে আনতে সক্ষম। জিডির মতো ডাটা থেকে তারা উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পুলিশ অফিসার ২১ বছর বয়সের একজন সন্দেহভাজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এই সন্দেহভাজন ভারতীয় পেনাল কোড সেকশিন ৩০৭ (এটেম্পট টু মার্ডার) এর অভিযোগে আটক। ক্রাইম জিপিটি ডাটাবেজ থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে তার পরিচয় শনাক্ত করবে এবং সন্দেহভাজনের অতীত অপরাধেরও ধারাবিবরণী দেবে।
‘এটি অনেকটা সহকারীর ভূমিকা রাখবে। পুলিশ ফোর্সের এখন কোনো প্লাটফর্ম নেই। আর এজন্য ফেসিয়াল রেকগনিসন বা অডিও সার্চ তারা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে করলে কাজ সহজ হয়ে যায়। এখন পুলিশের কাছে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবে।’ রাই জানান।
রাইয়ের দল এই কাজ করার কিছু প্রতিবন্ধকতাও পেয়েছেন। ভারতীয় সংস্কৃতিতে এ কাজ কঠিন। অনেক ডাটাই অগোছালো। তাছাড়া হিন্দি ডাটা বাছাই করাও জটিল। ইংরেজি ডাটা ও রিসোর্সেই আপাতত নির্ভর করতে হচ্ছে।
বায়াস ও নৈতিক কিছু সংকট রয়েছে এখানে
রাইয়ের প্রতিষ্ঠান কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হয়েছে। উত্তর প্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাদের কার্যক্রম গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। বায়াসের সমস্যা আসলে ফিলটারড ডাটা নিয়ে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে। রাই তাও আশাবাদি। তার মতে এর উপকারিতা এখন ভারতের অনেক অংশেই উপলব্ধ হচ্ছে।