Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদবিদেশে ‘সরানো’ দুই লাখ কোটি টাকার খোঁজে বাংলাদেশ

বিদেশে ‘সরানো’ দুই লাখ কোটি টাকার খোঁজে বাংলাদেশ

জয় বাংলাদেশ: দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদের হদিস পেতে সে দেশের সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগীদের সম্পদ যুক্তরাজ্যে পাচার করা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের ওপর নতুন সরকার যে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নতুন প্রশাসন তদন্ত করছে যে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি পাউন্ডের সমপরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরানো হয়েছে কি না। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সহযোগীরা সম্পদ গড়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকার ‘বেশ সহায়তা’ করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন; তাঁরা অনেক কারিগরি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর কেনা ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তির অর্থের উৎস সম্পর্কে বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এসব সম্পদ বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করতে চায়; সে লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা; কিন্তু বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলতে রাজি হননি।

শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক বিধিনিষেধ আছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের নাগরিকেরা বৈধভাবে মাত্র কয়েক হাজার ডলার বিদেশে নিতে পারেন।

আহসান মনসুর বলেন, ‘এই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’ তবে তিনি এ–ও বলেন, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি ভারতের কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। ফলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের পক্ষে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে এসব অভিযোগ যুক্তরাজ্যের স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির সরকারের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে। শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক লেবার সরকারের সিটি মিনিস্টার। যদিও এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত করা হয়নি যে টিউলিপ সিদ্দিক এসব অপকর্মের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি।

শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে এক সাক্ষাতে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ দেশটি থেকে ‘চুরি হওয়া ও বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনবে। সরকারের যেসব অগ্রাধিকার রয়েছে, এটি তার মধ্যে অন্যতম।’

শেখ হাসিনা দুই দশক বাংলাদেশ শাসন করেছেন; কিন্তু তাঁর শাসনামলে ভোট চুরি, অধিকার লঙ্ঘন ও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ একটি ছাত্রবিক্ষোভের জন্ম দেয়, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর সরকারকে উচ্ছেদ করে।

চলতি বছরের শুরুতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন কোম্পানির সম্পত্তি আছে। সে দেশে যে বাংলাদেশিদের এ রকম ‘অব্যাখ্যাত সম্পদ’ আছে, এটি তার নজির। তারা বলেছিল, যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত হবে, এসব খতিয়ে দেখা।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন দপ্তর ও কোম্পানি–সংক্রান্ত দপ্তরের নথি খতিয়ে দেখেছে। তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া যায় যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিয়ন্ত্রণ করেন এমন প্রতিষ্ঠান ১৫ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যের অন্তত ২৮০টি সম্পত্তি অর্জন করেছে।

এসব সম্পদ ২০১৬ সালের পর থেকে কেনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ভূমি কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, বেশির ভাগ সম্পদ কেনা হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ কিনেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে ফ্রিহোল্ড বা চিরকালীন মালিকানার অধিকারের সম্পদ আছে, যার মধ্যে রয়েছে লন্ডনের মূলকেন্দ্রের ফিটজ্রোভিয়া এলাকার এমারসন বেইনব্রিজ হাউস, পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে ৬১টি বাড়ি ও ব্রিস্টলে একটি সমবায় সুপারমার্কেট।

যুক্তরাজ্যে এসব সম্পদ কেনার অর্থ কোত্থেকে এসেছে তা পরিষ্কার নয়। যদিও নথিপত্র দেখে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, কিছু সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে বন্ধকি ঋণ নেওয়া হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবী আজমালুল হোসেন ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তাঁর মক্কেলের ‘লুকানোর কিছু নেই’ এবং তিনি কোনো কিছু চুরি করেননি। তিনি আরও বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী চতুর্থ প্রজন্মের ব্যবসায়ী। রাজনীতিতে আসার আগে সেই ১৯৯০-এর দশক থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে সম্পদ কিনছেন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী চলতি বছরের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক ব্যবসার অর্থ থেকে তিনি বিদেশে সম্পদ কিনেছেন। আজমালুল হোসেন বলেন, ড. ইউনূসের ‘অসাংবিধানিক সরকার’ আওয়ামী লীগ সদস্যদের নেতাদের নিপীড়ন করছে। তিনি আরও বলেন, ‘একটি উল্লেখযোগ্য আশঙ্কা রয়েছে যে মিস্টার চৌধুরী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।’

শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, তদন্ত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীরা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। তিনি আরও বলেন, ‘(নতুন সরকার) সব কিছুকে বড় দুর্নীতি হিসেবে দেখাতে চাইছে। তাঁরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দোষী করতে চাইছেন। তবে এটা ভালো যে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা হচ্ছে …এসব অভিযোগ তাঁদের প্রমাণ করতে হবে।’

যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ করেছে কি না, সে বিষয়ে তারা কিছু বলবে না। এ বিষয়ে তাদের অনেক পুরোনো নীতি রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments