ইওরোপ-চীন-আমেরিকার যৌথ প্রচেষ্টায় ইরানের পরমানু ইস্যু সহ বহু আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ সমাধান করা সম্ভব।ইওরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল একথা বলেছেন।ইরানের সাথে পরমানু চুক্তি স্বাক্ষরকারী ৫জাতির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ভিডিও বৈঠকে তার এই দাবি।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেণ্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে ইরানের মধ্যেকার শত্রুতায় বিশ্বপরিস্থিতি যে চরিত্রে উত্তেজনা ও পারস্পরিক কলহে ছুটছিলো,তা থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখন সমঝোতার দুয়ারে।
ইরান এবং আমেরিকার মধ্যেকার এবং আমেরিকা ও ইওরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেকার তিক্ত সম্পর্ক বিদায় হয়েছে অনায়াসে হোয়াইট হাউসে পরিবর্তন আনার সাথে সাথে।ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন, উল্লেখিত শত্রুতার অন্ধকারও আলোর তলায় গেছে।বিশ্ব পরিস্থিতি হয়ে গেছে সম্পূর্ণ বিপরীত।মারণাস্ত্র প্রয়োগ ছাড়াই অটোমেটিক পরিবর্তন।
এই পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন আমেরিকার মহান ভোটার নাগরিকরা।তারা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য করেছেন।দাংগা খুন ও সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে সামাজিক সমঝোতা ও আইনের ধারায় ফিরিয়ে আনলেন হোয়াইট হাউসকে।যে ধারা স্বাভাবিক গতিতে বিশ্ব-সম্পর্কে প্রভাবিত করেছে।বিশ্বের প্রধান প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতা ভিত্তিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনায় পারমানবিক ঝুঁকি থেকে মানব জাতি আপাততঃ নিরাপদ হলো বলা যায়।
বিশ্ব সমাজে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের প্রতীক আমেরিকা।পৃথিবীর প্রায় সব জাতির মানুষের এক অপূর্ব মোহনা এই আমেরিকা।পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ধারায় সব চেয়ে প্রতাপশালীদের প্রভাব ও চাহিদার সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে আমেরিকার সরকার।সর্ববৃহৎ কর্পোরেটগুলোর দরকার পারমানবিক যুদ্ধের পরিস্থিতি থেকে বিশ্বকে তথা নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখা।
আমেরিকা বিশ্বের এই কর্পোরেটদের নেতৃত্ব করছে এবং তাদের নিরাপত্তায় সমুদ্রের তলদেশ থেকে আকাশ পর্যন্ত নজরে রেখেছে।এক্ষেত্রে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতাই হচ্ছে বিশ্বনীতির প্রধান গুরুত্বের।বাইডেন-কমলা-কেরি-এন্তনি-অষ্টিন গ্রুপের সরকার প্রধান প্রধান কর্পোরেটদের মধ্যে কলহ সৃষ্টির পরিবর্তে সমঝোতার নীতিতে রয়েছেন অটল।
যা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার সাথে সমন্বয় রেখে বিশ্বনেতৃত্ব রক্ষার পক্ষে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমর্থন পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তৃতীয় বিশ্বের দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর অনুসরণে অ্যামেরিকায় তথাকথিত জাতীয়তাবাদী শ্লোগানের রাজনৈতিক কৌশল আত্নঘাতি।বিশ্বনেতাকে সারা বিশ্বের অপরাপর বিশ্ব শক্তি এবং স্মভাব্য শক্তিগুলোর বাস্তব ঝোঁকের দিকে নজর রাখতে হয়।
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের নামে রাশিয়া জাতিগত বিদ্বেষ, গোষ্ঠীগত নিপীড়ন ও প্রতারণার দায়ে এবং সীমাহীন অক্ষমতায় নিজ থেকে ভেঙ্গে ছিহ্ন ভিন্ন হবার পর থেকে ধনী দরিদ্রদের এই বিশ্বশক্তি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র(United States Of America) একক বিশ্বশক্তির শিরোপা অর্জন করে।
দুই পরাশক্তির শীতল লড়াই থেকে দুনিয়া রক্ষা পায়।দুনিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি আমেরিকার দায়িত্ব হয়ে যায় সবল দুর্বলদের সাথে ভারসাম্যের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অগ্রসর করায় দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।
সোভিয়েত বলয়ের দেশগুলো আমেরিকার অধীনস্থ গ্রহণের জন্যে দেন দরবার প্রতিযোগীতায় নামা।এমন প্রেক্ষাপটেই ভারতে আর.এস.এস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির যুগ চালু হয়ে যায়।
যে পথ ধরে ভারতীয় কর্পোরেটগুলো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিজস্ব বাহিনীরূপে ব্যবহারের সুযোগ হাতে পায় এবং ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরের রাজনীতি চাঙ্গা হয়,হয় অপ্রতিরোধ্য। তবে ভারতে যা সহজ,আমেরিকার ভেতরে তা কঠিন, আপাততঃ পরিত্যক্ত।
আমেরিকা উম্মাদী রাজনীতি গ্রহন করেনা।আমেরিকান রাজনীতিবিদ ফিউডাল এটিচ্যুড দেখায়না।পুঁজিবাদী সংস্কৃতির সৌন্দর্য্যের অংশীদারিত্ব এই নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। সামরিক মেজাজ আর রাজনৈতিক ভদ্রতাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেনা পুঁজিবাদী স্বভাব।তাই আমেরিকার হাঁটুর কাছে থাকা কিউবায় কম্যুনিষ্ট সরকার থাকা স্বত্তেও নিরাপদ আছে। চমৎকার একটা বোঝাপড়া উপস্থিত সেখানে।
ইরানও আমেরিকার মিত্র দেশ।আবার আমেরিকার স্বার্থে সম্ভাব্য হুমকি।ওখানে প্রতিযোগীতার এক পিঠে আছে বন্ধুত্ব,আরেক পিঠে চাপ সৃষ্টি।তাই ইরানের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করার নীতি চালু রেখেছে আমেরিকান রাজনীতি এবং প্রশাসন।যে রাজনীতিতে চীন,ইওরোপ এবং আমেরিকাকে এক সঙ্গে পাওয়া জরুরী।তারই উজ্জল প্রমাণ হচ্ছে ইরানের সাথে আমেরিকার করা ৬ জাতির সমঝোতা চুক্তি।
বছরের বছর ধরে ওবামা-কেরি বাহিনী এই সমাধান সংগঠিত করেন এবং দুনিয়াকে এই সফলতার বিজয় দিয়েছিলেন উপহার।যা কলমের এক খোঁচায় অস্বীকার করেছিলেন প্রেসিডেণ্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।এই সমঝোতা চুক্তি আবার হতে চলেছে সক্রিয়।কেননা আমেরিকার বিশ্ব-সম্পর্ক সম্পর্কিত প্রাতিষ্ঠানিকতা নিশ্চিহ্ন করা অনেক কঠিন।একজন ব্যক্তি যতই ক্ষমতাবান ও সাহসী হোক,আমেরিকার রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিকতার সামনে খড় কুটোর চেয়েও দুর্বল।
হোয়াইট হাউস দখল অভিযান ও কংগ্রেসে আক্রমণের পরিস্থিতিতে একজন প্রেসিডেণ্টের দুর্দন্ড ক্ষমতার অপব্যবহারের এক জটিল ও ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে আমেরিকান প্রতিরক্ষা শক্তি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব কার্যকরে সামান্যও ভুল করেনি।এটি একটি ছোট্ট উদাহরণ মাত্র।বিশ্বের কোন কোন দেশে নিজের জ্ঞান সীমায় কেউ কেউ আমেরিকার বদনাম খুঁজছিলেন নিজের স্বান্তনা মিটাতে। পোকা মাকড়ের লম্ফ ঝম্পে দেয়াল ভাঙ্গেনা,দেয়াল ফাটেওনা।
আমেরিকার প্রেসিডেণ্ট ট্রাম্প ইরানে আক্রমন করলেন।চুক্তি থেকে বের হবার ঘোষণা দিয়ে অন্যান্য বিশ্বনেতাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে বিশ্ব-মিত্রদের কাছ থেকে আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন করলেন।তবে আমরা কি দেখলাম?
প্রেসিডেণ্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আরো থাকার স্বপ্ন হারালেন।বেরিয়ে গেলেন নিঃশব্দে।আমেরিকার সকল প্রাতিষ্ঠানিকতা সক্রিয় থাকলো- আপন বৈশিষ্ট্যে,নিজস্ব গতিতে।অপর কেউ প্রাতিষ্ঠানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করলে তাও একই পরিণতি অনিবার্য্য।হোয়াইট হাউস যদি অতি আত্ন বিশ্বাসে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, আমেরিকার মর্যাদার বিনাশ অনিবার্য্য।
সাম্প্রদায়িক শক্তি আগের তূলনায় সংঘবদ্ধ এবং ইরানের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ বাঁধানোর পক্ষ ও সক্রিয়। মনে রাখতে হবে রাজনীতিতে কেউ পরাজিত হয়না। হয় দুর্বল অথবা সবল। পরাজিত কেবল যুদ্ধেই হয়। যুদ্ধে আমেরিকা জড়াবেনা।
বড়্ররা বড়রা সমঝোতার রাস্তায় থাকবে।এ রাস্তা তারা ছাড়বেনা। ইওরোপীয় ইউনিয়ন ও আরো ৪ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভিডিও আলাপের পর আমেরিকা সামনে পা দিচ্ছে চুক্তির পূর্ণ কার্যকারিতার সিদ্ধান্তে ফিরে যেতে।