আবু জাফর মাহমুদ
ভার্চুয়াল বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনকে মোকাবিলা করতে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের কথা বলেছেন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথসম্মেলন চীনকে বিচলিত করেছে।এই যৌথ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে সংবাদ হয়েছে চীন,রাশিয়া এবং ইরানসহ ১৬টি দেশ জোটবদ্ধ হচ্ছে।এ জোটে আরো রয়েছে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং কিউবা।এছাড়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদেশ হিসেবে অন্য যেসব দেশ থাকবে তারা হলো-আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বেলারুশ, বলিভিয়া, ক্যাম্বোডিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া,সেইন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডিন্স দ্বীপপুঞ্জ।
নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়তে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া অঙ্গীকারবদ্ধ। চার নেতার যৌথ নিবন্ধে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে চার দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয়।যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মতামত কলামে এ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন যৌথ বক্তব্যটি আজ ১৪ই মার্চ রোববার প্রকাশিত হয়।
পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য এই চার দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘দ্য কোয়াড’ নামে পরিচিত।গত শুক্রবার ভার্চ্যুয়ালি সম্মেলনের পর কলাম লেখেন চার দেশের নেতারা।
তাঁরা বলেছেন, মহামারির সমাপ্তি এবং এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে উত্তরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভূমিকা গ্রহণ এবং এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে না। সহযোগিতা ও সমন্বয় ছাড়া তা সম্ভব হবে না। তাই আসিয়ানের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবেন তাঁরা। সংকটের এই সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গেও সহযোগিতা বাড়াতে চান তাঁরা।
চীন আজ ১৪ই মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছে, ফোরাম দ্য কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াড এর সম্মেলন আবারও শীতল যুদ্ধকালীন বিষাক্ত মানসিকতার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।দেশটি আরও বলেছে, চীনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ’ধরণের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
শুক্রবার ১২ই মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আয়োজনে এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী বছরের শেষ নাগাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি ১০০ কোটির বেশি করোনার টিকা তৈরি হবে ভারতে।
পাকিস্তান,জিম্বাবুয়ে ও ডমিনিকান রিপাবলিকে চীনের টিকা সরবরাহের পর এই পদক্ষেপ নিল কোয়াড।
এক দশক আগে কোয়াড প্রতিষ্ঠিত হলেও শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক এই প্রথম।চীনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়তে কোয়াডের নেতারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সব মহলে আলোচনা হচ্ছে।
চীনের সঙ্গে কোয়াডভুক্ত চার দেশেরই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সেনাবাহিনীর সঙ্গে চীনের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।জাপানের নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ এলাকার কাছেও চীনের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড রয়েছে।
এ ছাড়া বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের জেরে অস্ট্রেলিয়ার পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন।এ’কারণে চীন এই বৈঠককে নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।এদিকে চীনের আরো পাঁচটি কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা। দেশটি বলছে, এসব কোম্পানি আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
আমেরিকা চীনের যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে তার মধ্যে টেলিযোগাযোগের জায়ান্ট হুয়াওয়ে রয়েছে।
আমেরিকার ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন বা এফসিসি ঘোষণা দিয়েছে যে, এসব কোম্পানিকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
এফসিসি বলেছে- হুয়াওয়ে টেকনোলজি কোম্পানি, জেডটিই করপোরেশন, হাইতেরা কমিউনিকেশ্ন্স কর্পোরেশন, হাংঝু হাইকেভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি কোম্পানি এবং ঝেজিয়াং দাহুয়া টেকনোলজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।