জয় বাংলাদেশ: ভারতের কট্টরপন্থী দল বিজেপিতে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের কারণ পুরোনো ও নতুনদের সংঘাত। এ টানাপোড়নের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরকে হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী উপহার দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর বিজেপি এ মুহূর্তে ব্যস্ত দলের ক্ষোভ সামাল দিতে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলের প্রবীণ নেতাদের অসন্তোষ এত তীব্র হয়ে ওঠে যে গত সোমবার দলকে সেই তালিকা প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে।
বহু বছর ধরে যাঁরা দল করে আসছেন, তাঁদের উপেক্ষা করে নতুন দলে আসা ভিনদলীয় সদস্যদের প্রার্থী করায় গেল সোমবার জম্মুতে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চলে। প্রবীণ নেতারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পার্টি অফিসে অমিত শাহর ছবি নামিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। পরিস্থিতির সামাল দিতে দুই ঘণ্টার মধ্যে সেই তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এতে ৪৪ প্রার্থীর নাম ছিল। পরে প্রকাশ করা হয় ১৬ নেতার এক সংক্ষিপ্ত তালিকা। দলের সভাপতি রবীন্দ্র রায়নাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে।
জম্মু-কাশ্মীরের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব বিজেপি দিয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক রামমাধবকে। পাঁচ বছর আগে তিনিই ছিলেন এ রাজ্যের দায়িত্বে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পর রামমাধবকে জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার জয়ের তাগিদে আবার তাঁকে ফেরানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর তদারকিতে তৈরি তালিকা ঘিরে ক্ষোভের সামাল দিতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। এখানে ভোট হবে তিন দফায়। প্রথম দফার ভোট ১৮ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দফার ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর। তৃতীয় দফার ভোট ১ অক্টোবর। ফলাফল প্রকাশ ৪ অক্টোবর।
বিজেপির মতো এতটা না হলেও বিরোধী শিবিরেরও সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না। ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) সঙ্গে জোট বাঁধতে শ্রীনগরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। এনসি, কংগ্রেস ও সিপিএমের জোটবদ্ধ হওয়ার কথা ঘোষণার দুই দিন পর আসন সমঝোতা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। ফলে জরুরি ভিত্তিতে শ্রীনগরে পাঠানো হয় কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল ও সলমন খুরশিদকে। গত সোমবার ফারুক আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক হয়েছে, বিধানসভার মোট ৯০ আসনের মধ্যে এনসি লড়বে ৫১ আসনে, কংগ্রেস ৩২টিতে। সিপিএম ও প্যান্থার্স পার্টিকে ছাড়া হচ্ছে একটি করে আসন। বাকি ৫ আসন নিয়ে এনসি ও কংগ্রেস একমত হতে পারেনি। ওই ৫ আসনে এই দুই দল বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই করবে জানিয়েছে। এর অর্থ, বিজেপির মতো বিরোধী জোটও ঝঞ্ঝাটমুক্ত নয়।
১০ বছর পর জম্মু-কাশ্মীরে হতে চলেছে বিধানসভার ভোট। লড়াই প্রধানত বিজেপির সঙ্গে এনসি-কংগ্রেস-সিপিএম জোটের। এ জোটে পিডিপিকে শামিল করা হয়নি প্রধানত এনসির আপত্তিতে। আবদুল্লাহ পরিবার মনে করে, বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়ায় পিডিপি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অথচ বিজেপির ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে পিডিপি গুপকর অ্যালায়েন্সের শরিক হয়েছিল। তারা ইন্ডিয়া জোটেরও শরিক। পিডিপিকে জোটে না নেওয়ায় উপত্যকায় বিরোধীদের ভোট শেয়ার কিছুটা কমবে। এতে পরোক্ষে বিজেপির সুবিধা হতে পারে, যদিও উপত্যকায় তারা শক্তিহীন।
বস্তুত, বিধানসভা ভোটে উপত্যকায় বিজেপি নির্ভর করছে দলছুটদের ওপরে। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির মদদে গড়ে উঠেছিল আপনি পার্টি। পিডিপির সাবেক নেতা আলতাফ বুখারির নেতৃত্বে ওই দল গড়া হয়। কংগ্রেসের সাবেক নেতা গুলাম নবি আজাদকে খাড়া করে গড়ে তোলা হয় ‘আজাদ পার্টি’। কিন্তু লোকসভা ভোটে তারা কিছুই প্রায় করতে পারেনি। সেই ভোটে বরং প্রবলভাবে উঠে আসেন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে পরিচিত তিহার জেলে বন্দী ইঞ্জিনিয়ার রশিদ, যিনি দুই লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন এনসির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে।
সেই ইঞ্জিনিয়ার রশিদ এবার বিধানসভা ভোটেও প্রার্থী দিচ্ছেন। তাঁর সংগঠনের নাম ‘আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টি’। এ দল ১০ থেকে ১২টি আসনে প্রার্থী দেবে। লড়বে স্বতন্ত্র হিসেবে। এরই পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন নিষিদ্ধ জামায়াত–ই–ইসলামির নেতারা। বিজেপি চেয়েছিল ওই সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। উদ্দেশ্য, সরকার গঠনে তারা যাতে আপনি ও আজাদ পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে সমর্থন দিতে পারে। কিন্তু আরএসএসের আপত্তিতে অমিত শাহ পিছু হটতে বাধ্য হন। এখন ঠিক হয়েছে, জামায়াত নেতারা অন্য সংগঠনের হয়ে ভোটে লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। সেই সংগঠনের নাম ‘তেহরিক–ই–আওয়াম’।
৯০ আসনবিশিষ্ট জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় সরকার গড়তে ম্যাজিক ফিগার ৪৬। কেউ তা ছুঁতে না পারলে কেন্দ্রশাসিত এ অঞ্চলের ভার আবার কেন্দ্রের হাতে চলে যেতে পারে। জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে সরকার কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চায় না।