জয় বাংলাদেশ: আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্স (এমপক্স) নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। একসময় মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত এই উচ্চ সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত সাড়ে চারশো মানুষ মারা গেছেন। রিপোর্ট বিবিসির।
এমপক্স রোগের জন্য মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দায়ী, যা স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের ভাইরাসের শ্রেণিভুক্ত, তবে কম ক্ষতিকর। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রথমে পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছিল, কিন্তু এখন মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমণ ঘটছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত এমপক্সে সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং মারা গেছেন অন্তত ৪৫০ জন।
বৃষ্টিপ্রধান আফ্রিকার ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি। আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) অন্যতম। এখানে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এমপক্সে আক্রান্ত হন এবং শত শত মানুষ মারা যান। বিশেষ করে ১৫ বছরের নিচের শিশু-কিশোররা বেশি আক্রান্ত হয়।
এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। ২০২২ সালে এমপক্স নিয়ে ডব্লিউএইচও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল, যা ক্লেড ২ এর মৃদু সংক্রমণের কারণে জারি করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে বেশি প্রাণঘাতী ক্লেড ১ এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, যেখানে মৃত্যুহার ১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে ক্লেড ২ ধরনের এমপক্স প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, যার মধ্যে এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে এমপক্স ভাইরাসের রূপান্তর ঘটে, যার ফলে ক্লেড ১বি নামে নতুন একটি ধরন তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গত মঙ্গলবার, আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) রোগটি নিয়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বর্তমান প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সিডিসি সতর্ক করেছে।
এমপক্সের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘাম, পিঠে ব্যথা এবং পেশির ব্যথা। জ্বর সেরে গেলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ফুসকুড়ি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং খোসপাঁচড়ায় পরিণত হয়। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে মুখ, চোখ, যৌনাঙ্গে ক্ষত দাগ দেখা দিতে পারে।
এমপক্স প্রধানত সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক সম্পর্ক, ত্বকের স্পর্শ, এবং শ্বাসপ্রশ্বাস। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, চোখ, নাক বা মুখের মধ্য দিয়ে। এছাড়া ভাইরাস লেগে থাকা বস্তু, যেমন বিছানাপত্র, জামাকাপড় এবং তোয়ালে স্পর্শ করেও এটি ছড়াতে পারে। সংক্রমিত পশুদের মাধ্যমে, যেমন বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালিও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
২০২২ সালে মাংকিপক্স ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের ভূমিকা ছিল।
সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম ব্যক্তি এবং সমকামী পুরুষরা। তবে সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা যে কেউই সংক্রমিত হতে পারেন, যার মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীর পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত।
এমপক্স সংক্রমণ ঠেকাতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো, নিয়মিত সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধোয়া, এবং সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সংক্রমিত ব্যক্তিকে সঙ্গনিরোধে রাখা প্রয়োজন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে কনডম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এমপক্স সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায় হচ্ছে টিকা গ্রহণ। যদিও টিকা শুধুমাত্র তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে বা রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে রয়েছেন। সম্প্রতি ডব্লিউএইচও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি টিকা সরবরাহ বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়েছে, এমনকি সেই দেশগুলোতেও যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে এ টিকার অনুমোদন নেই।