সাধারণত দেশের জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করে থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব তাদের নির্দিষ্ট আইডির মাধ্যমে কাজটি করে দেন। পরে সেগুলো সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে দেখতে পান নিবন্ধনকারী। এক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে পৌরসভা কিংবা ইউনিয়নের কম্পিউটার অপারেটরদের কাছে নিজেদের আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখেন মেয়র, চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তাদের ওই আইডির এক্সেস ব্যবহার করেই সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা ইউনিয়নের ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন সরবরাহ করে আসছে একটি চক্র। যে কোনো রোহিঙ্গা চাইলেই মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিক। জন্ম-নিবন্ধন করার পর অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রও নিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না, মো. রাসেল খান, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুর রশিদ ও সোহেল চন্দ্র।
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এই ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি বলছে, চক্রটি বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জ এবং দিনাজপুর জেলার ভিন্ন ভিন্ন থানা এলাকা থেকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে দিতো। এজন্য ফেসবুকে বিভিন্ন নামে পেজ খুলে প্রচারণা চালাতো তারা। তাদের মাধ্যমে অনেক দাগি আসামিও নিজের নাম পরিচয় পাল্টে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন নিয়েছে। আবার অনেকে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করছেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রশিদ দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর এবং সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০ নং রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। সংশ্লিষ্ট পৌরসভা মেয়র ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের জন্ম নিবন্ধনের এক্সেস ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিরল উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে দেখিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন কপি এবং নাম্বার দিয়ে আসছিলো তারা। এক্ষেত্রে তাদেরকে বিভিন্ন ব্যক্তির ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে দেয়ার কাজ দিতো গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম মুন্না ও রাসেল খান। মুন্না ও রাসেল বাগেরহাট এবং নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তারা ৫ জনই একে অপরের পরিচিত এবং পরস্পরের সহায়তায় স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জনগণকে বিরলের অধিবাসী দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহের কাজ করে আসছিলো। এ কাজে তারা সবাই আনুপাতিক হারে লাভ পেতো।
আসামিদের গ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দেয়া ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দণি) বিভাগের এডিসি (অর্গানাইজড এন্ড ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম) মো. সাইফুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ২ জন কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে এবং অপর ২ জন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি, বিশেষত রোহিঙ্গা জনগণের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরিতে ব্যাপক লাভ দেখে তারা এই কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। যেহেতু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী নাগরিক না এবং স্থানীয় নাগরিক পরিচিতির অভাবে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে তাদের কোনো এক্সেস নেই। এ কারণে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ভুয়া নিবন্ধন তাদের জন্য সুবিধাজনক হওয়ায় বহু রোহিঙ্গা চক্র ভুয়া জন্ম নিবন্ধন-সনদ তৈরি করে নিয়েছে এবং এর মাধ্যমে গ্রেপ্তাররাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। দেশের প্রায় সব ধরনের সেবা ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ব্যবহারকারী সবাইকে তাদের আইডি পাসওয়ার্ড অধীনস্থদের কাছে দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।