জয় বাংলাদেশ : যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মার্কো রুবিওকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এটা হলে এই প্রথম লাতিনো বংশোদ্ভূত কোনো রাজনীতিক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন।
রুবিওর জন্ম ফ্লোরিডাতেই। তিনি বিগত বছরগুলোতে চীন, ইরান, কিউবাসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান রেখেই শক্তিশালী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে কথা বলেছেন।
তবে ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের অবস্থানে নমনীয় হয়েছেন রুবিও। এর আগে ট্রাম্প অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টরা ব্যয়বহুল ও ব্যর্থ অনেক যুদ্ধে জড়িয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা আরও সংযত একটি পররাষ্ট্রনীতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সূত্র জানিয়েছে, গতকাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য ট্রাম্পের পছন্দে রয়েছেন রুবিও। তবে ট্রাম্পের যে চরিত্র, তাতে তিনি যেকোনো সময় তাঁর সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ট্রাম্পের প্রতিনিধি ও রুবিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা কোনো মন্তব্য করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে রুবিওকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারণ, ২০১৭ সালে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় বসেন, সে সময়ের চেয়ে বর্তমান বিশ্ব আরও বেশি অস্থির ও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে চীন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ৫৩ বছর বয়সী রুবিও দায়িত্ব নিলে তাঁর কার্যতালিকার শীর্ষের দিকে থাকবে ইউক্রেন যুদ্ধ। সম্প্রতি কয়েকটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। গত এক দশকে ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে, সেগুলো মুক্ত করার চেয়ে আলোচনার পথে এগোনোই কিয়েভের জন্য ভালো হবে।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার জন্য যে ৯৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে পাস হয়েছে, তার বিরোধিতাকারী ১৫ রিপাবলিকান সিনেটরের একজন ছিলেন রুবিও। সেপ্টেম্বরে সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি রাশিয়ার পক্ষে নই। তবে দুর্ভাগ্যবশত বাস্তবতা হলো, ইউক্রেনের যুদ্ধ আলাপ–আলোচনার মাধ্যমেই শেষ হবে।’
৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন ট্রাম্প। এই নির্বাচনে লাতিন ভোটারদের বড় একটি অংশ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে। এই ভোটাররা মূলত আগের নির্বাচনগুলোয় ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিতেন। তবে এবার তাঁদের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বদলাতে দেখা গেছে।
মার্কো রুবিওকে সরকারের প্রধান একটি পদে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে ট্রাম্প হয়তো লাতিন ভোটারদের এটা স্পষ্ট করতে চাচ্ছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোয় তাঁদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাম্পের সাবেক প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের লাতিন আমেরিকাবিষয়ক উপদেষ্টা মাউরিসিও ক্লেভার–ক্যারোন বলেন, ‘রুবিওর নিয়োগ যদি নিশ্চিত হয়, তাহলে তিনি সম্ভবত আগের যেকোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে লাতিন আমেরিকাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন।’