বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি প্রয়োজনে আরও সংকোচন করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সংস্থাটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে পণ্যের উচ্চমূল্য ও বৈশ্বিক আর্থিক খাতে অর্থপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট বেড়েছে। চলতি হিসাব সংকুচিত হলেও হঠাৎ আর্থিক হিসাবের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও টাকায় চাপ পড়েছে। এই চাপ সামলাতে অবশ্য মুদ্রার বিনিময় হার সংশোধনে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি প্রয়োজনে আরও সংকোচন করা যেতে পারে। আর রাজস্বনীতির অবস্থান মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে সহায়ক হতে হবে। বাংলাদেশের অনুকূলে তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদনের দিনে কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ছাড়া বাকি সব শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
এদিকে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্ধিত ঋণসুবিধা (ইসিইএফ), বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) অধীন ঋণসহায়তা কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষ হয়েছে। ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ইসিএফ/ইএফএফের অধীন বাংলাদেশ পাচ্ছে ৯২৮ মিলিয়ন বা ৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং আরএসএফের অধীন ২২০ মিলিয়ন ডলার বা ২২ কোটি ডলার সমমূল্যের এসডিআর (স্পেশাল ড্রইং রাইটস)। অর্থাৎ তৃতীয় দফায় বাংলাদেশ পাচ্ছে মোট ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার সমমানের এসডিআর। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের শর্ত পূরণ হয়নি। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেবে এই শর্তে রিজার্ভের শর্তে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী গত ডিসেম্বর নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ বলেছে, ডিসেম্বর নাগাদ কর রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। এর বাইরে সামাজিক ব্যয়, জ্বালানি তেলের ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয়, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির তথ্য প্রকাশ সহ অন্যান্য শর্ত পূরণ হয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, আমদানি সংকোচন নীতির কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের অর্থবছরে বিদেশি মুদ্রার সংকট কাটলে এবং আমদানি স্বাভাবিক হলে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উঠতে পারে।