জয় বাংলাদেশ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গুলি করে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হত্যা মামলা। সোমবার ও গতকাল রোববার এসব মামলা করা হয়।
এর বাইরে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে এ–সংক্রান্ত মামলা হয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ১৪৯টি মামলা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩৩টিই হত্যা মামলা।
নতুন চার মামলার মধ্যে একটি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রনি (১৯) নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে করা হয়েছে। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত রনির মা বাদী হয়ে গতকাল মামলাটি করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ জুলাই রাতে মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা মিছিলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা গুলি ছোড়েন। তখন রনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আরেকটি মামলায় যাত্রাবাড়ীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ওবায়দুল হাসানকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে শেখ হাসিনাসহ আসামি নয়জন। ওবায়দুলের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন বাদী হয়ে আজ মামলাটি করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী ৫ আগস্ট দুপুরে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। পরে তাঁর কোনো খোঁজ পাননি। পরদিন পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্বামীর মরদেহ খুঁজে পান। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, যাত্রাবাড়ীর হানিফ উড়ালসড়কের নিচে পুলিশ ও অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া গুলিতে তাঁর স্বামী মারা গেছেন।
মরিয়ম খাতুনের করা মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে আসামি করা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মেহেদী নামের এক অটোরিকশাচালককে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গতকাল শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। মেহেদী নিজেই বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদপুরের ‘ময়ুর ভিলা’ নামে একটি ভবনের সামনে ৪ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নেন মেহেদী। তখন স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদসহ অন্যরা তাঁকে গুলি করেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
বিল্লাল নামের এক যুবককে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিল্লালের করা ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ জুলাই বিকেলে যাত্রাবাড়ীর কাজলার পাড়ে আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি করেন। তখন গুলিবিদ্ধ হন বিল্লাল। এরপর দীর্ঘদিন তিনি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনকে অসামি করা হয়েছে।