জয় বাংলাদেশ: চট্টগ্রামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ ৪২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিনের আদালতে মামলাটি করেন ব্যবসায়ী মামুন আলী। একই মামলায় আসামি করা হয় শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককেও।
মামলার বাদীর বক্তব্য গ্রহণের পর আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিলে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে বিচারক বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান। পরে সরাসরি থানায় মামলা নেওয়ার আদেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সেতু ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, নগর গোয়েন্দা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত, নগরের হালিশহর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব কুমার চৌধুরী, আওয়ামী লীগের নেতা এরশাদুল আমীন, হালিশহর থানার তৎকালীন এসআই জামাল উদ্দিন, মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ।
মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট নগরের হালিশহর এলাকায় বাদীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান করছিলেন। ওই সময় হালিশহর থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন। সেখানে উপস্থিত থাকা বিএনপির ১৭ জন কর্মীসহ বাদীকে ধরে থানায় নিয়ে যান। থানায় ওসির নেতৃত্বে বাদীকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে বাদীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। বাদীকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয় তাঁর বাবার কাছে। বাদীর বাবা ওসির দেখানো দুজন লোককে সাত লাখ টাকা চাঁদা দেন।
এ ছাড়া ঘটনার দিন ওসি প্রণব চৌধুরী তাঁর মুঠোফোনে আসামি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ভিডিও কল দিয়ে বাদীকে নির্যাতনের চিত্র দেখান। পরে বাদী জামিনে বেরিয়ে এলে কয়েক দফায় তাঁকে থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
মামলার আদেশ নিয়ে হট্টগোল
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিনের আদালতে দুপুর ১২টার দিকে মামলার আবেদন করেন বাদী মামুন আলী। প্রায় ১০ মিনিট শুনানি শেষে বিচারক আদেশ দেন পিবিআইকে তদন্তের জন্য।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করেন। ওই সময় তাঁরা বলতে থাকেন পিবিআইকে তদন্ত নয়, সরাসরি থানায় মামলা নেওয়ার আদেশ দিতে হবে। একপর্যায়ে বিব্রত হয়ে বিচারক এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান। ওই সময় বিচারককে লক্ষ্য করে কটূক্তি করা হয়।
পাশাপাশি আদালতের বারান্দায় আদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন ১০০ থেকে ১৫০ জন লোক। আইনজীবীরা জানান, ওই সব লোক বাদীর সঙ্গে এসেছিলেন। এ বিষয়ে বাদীর বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিচারক এজলাসে আসেন। বাদীর করা আবেদন সরাসরি হালিশহর থানা-পুলিশকে এজাহার হিসেবে নিতে আদেশ দেন।
জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী আশরাফুর রহমান বলেন, ‘শুরু থেকে আমাদের আবেদন ছিল সরাসরি থানায় মামলা হিসেবে নেওয়ার আদেশের জন্য। কিন্তু আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আমরা বলেছি, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাব। আদালত তা না দেওয়ায় আমরা পুনরায় জোর আবেদন করেছি।’ হট্টগোল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আদালতে অনেকে থাকেন, কে বা কারা কী করেছেন, তা জানি না।’
নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এ এম হুমায়ুন কবির বলেন, এজলাসে হট্টগোল ও আদালতের বারান্দায় মিছিল হচ্ছে শুনে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়। বলেন, মক্কেলের দাবি আদায়ের জন্য আইনজীবী তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন। তবে তা কোনো অবস্থাতেই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নয়। আদালত যে আদেশ দেন, তার প্রতি সম্মান জানানো উচিত।