বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। একাত্তুরের লড়াকু সৈনিক। সাবেক ছাত্রনেতা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উজেলার সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী। নানা ঘাত পেরিয়ে, নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রবাসী বাংলাদেশী। নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সার্ভিসের অগ্রজ, কমিউনিটি সেবার পাশাপাশি মূলধারায় সম্পৃক্ত। ডেমক্র্যোট বাংলাদেশী হিসেবে কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার। বাংলা সিডিপ্যাপ আর অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও। যার মনপ্রাণ জুড়ে দেশপ্রেম আর ‘লাল-সবুজ’ এর বাংলাদেশ। শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে আয়োজিত এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে জানালেন- ‘অনেক হয়েছে। এখন সময় এসেছে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে কিছু দেয়ার, ঋণ শোখ করবার।’ বললেন- বাহান্নর ভাষা আন্দোলন আর একাত্তুরের মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনী সৈনিক দেশের ছাত্র সমাজ। আমরাও যার অংশিদার। আর এই সংগ্রামী ছাত্রসমাজের অনেকেই আজ প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত। আরো বললেন- প্রবাসের সকল এলামনাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে পারি তবেই দেশের জন্য, ‘জাতির মেরুদন্ড’ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমরা কিছু করতে পারবো, অবদান রাখতে পারবো। এই কাজ একা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সকল দেশের সকল বিশ্বাবদ্যালয়ের এলামনাইদের ঐক্য চাই, একটি প্ল্যাটফর্ম চাই।
সিটির উডসাইডস্থ গুলশান ট্যারেসে ‘এলামনাই এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিসিট ইভেন্ট’ এর ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির মূল উদ্যাক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার মূল বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা সহ ভাষা আন্দোলন আর মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ছবি দিয়ে সাজানো মূলমঞ্চ দৃশ্যত ছিলো এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। অনুষ্ঠানে ছিলো না কোন সভাপতি।
পবিত্র কোরআন আর বাইবেল থেকে পাঠের পর বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মওলানা সাদিক আর বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায়। এপর সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক আবু জাফর মাহমুদ। তাকে পরিচয় করিয়ে দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর ডিকেন্স। এরপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব সাঈদ তারেক, প্রবীন সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, বিশিষ্ট অভিনেত্রী রেখা আহমেদ, ডা. আকতার হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কবির কিরণ, শেরেবাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই মনোয়ার ইসলাম প্রমুখ।
সভায় বক্তারা স্বাধীন উত্তর বাংলাদেশ আর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সখর আন্দোলন-সংগ্রামে ছাদ্র সমাজের ভূমিকা সহ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন এবং জনাব আবু জাফর মাহমুদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। বক্তারা বলেন, আমরা প্রবাসীরা দেশের কাছে ঋনী। তাই সবাই ঐক্যবব্ধ হলে দেশ-জাতির জন্য যেকোন কল্যাণকর কাজ করা সম্ভব। তাই ঐক্যবব্ধ প্ল্যাটফর্ম দরকার বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগম বাউল সঙ্গীত কালা মিয়া, প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী চন্দন চৌধুরী, চন্দ্রা রায় ও ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত শিল্পী নীলিমা শশী। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই হাসান মাহমুদ ও প্লামী দাস সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। এছাড়াও আবৃত্তি করেন গোলাম মোস্তফা ও সৈয়দা পারভীন আক্তার।
জনাব আবু জাফর মাহমুদের ধন্যবাদ সূচক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্বের সমাপ্তি ঘটে। এসময় তিনি সকল এলামনাইদের ঐক্যবদ্ধ করতে একটি সাংগঠনিক রূপ দেয়ার জন্য উপস্থিত সকল এলামনাইদের প্রতি আহ্বান জানালে ‘বেশী রাত হওয়ায়’ আগামীতে সুবধা একটি দিনে আগ্রহীদের নিয়ে বনে একটি সংগঠনের নাম চুড়ান্ত ও সাংগঠনিক কাঠামো তৈরীর সিদ্ধান্ত হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোলাম মোস্তফা ও কবি রওশন হাসান। সবশেষে ছিলো নৈশ ভোজ।