সঞ্চয়পত্র সরকার পরিচালিত একটি বিনিয়োগ প্রকল্প। যেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে নির্ধারিত সময় পরপর মুনাফা পাওয়া যায়। সঙ্গে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকৃত মূলধনটিও উত্তোলন করা যায়। বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর দেশের নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন স্কিমের সঞ্চয়পত্র দিয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের খুঁটিনাটি বিষয়।
কেন সঞ্চয়পত্র করবেন?
দেশের নাগরিকদের বিনিয়োগের জন্য ঝামেলামুক্ত ও ঝুঁকিহীন মাধ্যম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। সরাসরি সরকার কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় এখানে ঝুঁকির পরিমাণ অন্যান্য বিনিয়োগের খাত থেকে অনেকটা কম। আর অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হারও বেশি। কখনো জরুরি প্রয়োজন হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে নেওয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে সুদের হার কিছুটা কমে যাবে।
সঞ্চয়পত্রের ধরন
পূর্বে বহুধরনের সঞ্চয়পত্রের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—
১। পেনশনার সঞ্চয়পত্র
২। পরিবার সঞ্চয়পত্র
৩। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
৪। ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র কেনার পদ্ধতি
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য প্রথমে কিছু ব্যক্তিগত কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয়। এরপর সঞ্চয়পত্র ইস্যূকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অথবা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট (https://nationalsavings.gov.bd/) থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট অফিসে ব্যক্তিগত কাগজপত্র সমেত জমা দিতে হবে।
কোথা থেকে কিনবেন
বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বমোট চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো এবং সকল পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। নগদ টাকা ও চেকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
সঞ্চয়পত্র কারা ক্রয় করতে পারে?
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ক্রয় করতে পারে। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্র ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশি নারী, ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক অথবা প্রাপ্তবয়স্ক শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ক্রয় করতে পারবে। অন্যদিকে, শুধুমাত্র সারকারি চাকরিজীবী, আধা-সারকারি চাকরিজীবী, বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে।
সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই খাতে বিনিয়োগে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটাই কম। তবে বাজারের আকস্মিক কোন পরিবর্তন ও সরকারি বিধিমালা সঞ্চয়পত্রের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে যেকোন অবস্থায় বিনিয়োগে অনাকাঙ্ক্ষিত আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ও পারিপার্শ্বিক বাজার নিয়ে গবেষণা করা নেওয়া উচিৎ।