Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeনিউইয়র্ক নিউজস্লোগান হোক ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’: আবু জাফর মাহমুদ

স্লোগান হোক ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’: আবু জাফর মাহমুদ

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের আওতায় গঠিত মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন ও গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবির সঙ্গে এবার উচ্চারণ করেছেন আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থাকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার। তিনি বলেন, প্রতিটি বাংলাদেশির প্রাণের স্লোগান হওয়া উচিৎ ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ।’

বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটিজ আয়োজিত ‘বিজয়ের বায়ান্ন’ অনুষ্ঠানে দেওয়া স্বাগত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। গত ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় উডসাইডের গুলশান টেরেসে আবু জাফর মাহমুদের মালিকানাধীন হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপাপ ও অ্যালেগ্রা যৌথভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে এই অনুষ্ঠানের।

অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সন্তানের ভ্রুণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত যে যন্ত্রণা, যে ভালোবাসা ও পরীক্ষা তা প্রতিটি মা উপলব্ধি করেন। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে বড় হয় পুরোটাই মায়ের মমতা ও যত্নে। মায়ের চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না। এই সত্য প্রত্যেক জাতির সঙ্গেও মিলে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে পারেননি। তাদেরকে দিয়ে আমরা সরকার গঠন করিনি। আমাদের ছিল না রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা। আমাদের কেউ মন্ত্রী ছিলেন না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী ছিলেন পাকিস্তান সরকারের, তাও কিছুদিনের জন্য। আমরা পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাম্বেলির মেম্বার পর্যন্ত ছিলাম না। পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকেই আমাদের বড় ভাইয়েরা সরকার গঠন করেন। তারাই আমাদের মুরুব্বি। আমরা তাদেরকেই মেনেছি। আমরা মেনে মেনেই এ পর্যন্ত এসেছি। এর ভেতরেই আমরা অনেক মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছি। বহু জীবন হারিয়েছি। বহু নেতা ও মুরুব্বিদের হারিয়েছি।

আবু জাফর মাহমুদ নিজের জীবনচিন্তা ও ধর্মানুভূতির কথা তুলে ধরে বলেন, জাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয়, আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা পবিত্র হয়। কিন্তু আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়েছেন, যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার জন্য কী করেছি, তার জাকাত কি? আমি বিশ্বাস করি, সেই জাকাতটিই হচ্ছে দেশের জন্য নিবেদিত হওয়া। সেই তাগিদ ও কর্তব্যের তাড়না থেকে, নতুন প্রজন্মের সামনে দেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে, মহান মুক্তিযুদ্ধের শুদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরার চিন্তা থেকেই এই আয়োজন। তিনি ষাটের দশকের দূরদর্শী ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খানের কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি জয় বাংলা শ্লোগান তুলে গোটা ছাত্রসমাজকে আন্দোলিত করে গোটা জাতির মধ্যে তার প্রভাব ছড়িয়ে দেন। সেই শক্তির রেশ এখনও চলছে। কিন্তু আজকে ভারতের বাঙালিরাও ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেয়। তিনি বলেন, আমরা আমাদের রাষ্ট্রগঠন করেছি, আমরাই আমাদের পতাকা নির্ধারণ করেছি, আমরাই আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিয়েছি। তাই জয় বাংলা শ্লোগান যখন দেন, তা যদি ভালোবেসে দেন, তাহলে তার সঙ্গে অবশ্যই রাষ্ট্র থাকতে হবে। বাংলাদেশ থাকতে হবে। জয় বাংলার পাশাপাশি শ্লোগান হতে হবে ‘জয় বাংলাদেশ’। এটিই প্রতিটি বাংলাদেশির শ্লোগান।

অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত অতিথি নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস উপস্থিত হতে না পারায় তার প্রতিনিধি ডেপুটি কমিশনার দিলিপ চৌহান যোগ দেন। তিনি অভিবাসীদের সুযোগ ও স্বপ্ন পুরণের প্রশ্নে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উদযাপনের ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনকে দৃষ্টান্তমূলক বলে অভিহিত করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের হাতে মেয়র এরিক অ্যাডাম্স এর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্মানসূচক ‘রিসাইটেশন’ প্রদান করেন। দিলিপ চৌহান জানান, এটি মেয়রের পক্ষ থেকে দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা। সেসময় মেয়রের জন্যও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটিজ এর বিশেষ সম্মাণনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাপ্তাহিক আজকাল এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, কবি রওশন হাসান, টাইম টিভি ইউএসএ’র সত্ত্বাধিকারী ও বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহের, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, নিউইয়র্ক মেয়রের উপদেষ্টা ফাহাদ সোলাইমান, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শ্যুটার ও অলিম্পিয়ান এস এম ফেরদৌস, চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কাজী আজম, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন, মূলধারার রাজনীতিক মামনুনুল হক, অধ্যাপক এম রহমান সুজন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদারসহ নিউইয়র্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্ম ও মানবতার বাণী প্রচার করা হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাদিক, বাইবেল থেকে পাঠ করেন রেভারেন্ড জেমস রয় এবং রামায়ণ ও গীতার শ্লোক থেকে আলোচনা করেন রাশেশ্বরী গোল্লাপুরি।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানসহ জনপ্রিয় সব দেশগান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী রিজিয়া পারভীন ও চন্দন চৌধুরী। আবৃত্তি করেন অভিনয় শিল্পী ও আবৃত্তিকার টনি ডায়েস ও মোস্তফা কামাল। নৃত্য পরিবেশন করেন প্রিয়া ডায়েস।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments